বগুড়ার তিনটি আসনে শরিকদের ছাড়, হতাশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে তিনটি শরিক ও মিত্রদের ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনটি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ, ইনু) এবং বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) ও বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ খবরে তৃণমূলের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বগুড়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। তিনি শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের পদ ছেড়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। তিনি ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য। এখানে তৌহিদুর রহমানের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালে সেখানে বিএনপির আবুল হাসানত চৌধুরী সংসদ সদস্য হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মোজাফফর হোসেন, ১৯৮৮ সালে ফ্রিডম পার্টি থেকে সৈয়দ মাসকুরুল আলম চৌধুরী, ১৯৯১ সালে জামায়াতের ইসলামীর শাহাদাত-উজ-জামান সংসদ সদস্য হন। ১৯৯৬ আসনটিতে বিএনপি থেকে এ কে এম হাফিজুর রহমান, ২০০১ সালে রেজাউল বারী, ২০০৮ সালে এ কে এম হাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য হন। পরে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ সংসদ সদস্য হন। তিনি ২০১৮ মাহমুদুর রহমান মান্নাকে হারিয়ে আবার সংসদ সদস্য হন।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকে একাধিক মামলাসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলামের ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। তাঁরা এবারের নির্বাচনে তৌহিদুর রহমানকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করেছিলেন। কিন্তু আবার দল থেকে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে ঝুঁকছেন বলে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া তৌহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বগুড়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। এখানেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদারকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এবার সিরাজুল ইসলামকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেওয়ায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ নেতা-কর্মীরা।
আসনটিতে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান আলী তালুকদার সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ১৯৮৬ সালে জাসদের এ বি এম শাহজাহান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ বি এম শাহজাহান, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির আবদুল মোমেন তালুকদার এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার সংসদ সদস্য হন।
এদিকে বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকেই বগুড়া-৪ আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জাসদের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। তবে ২০১৮ সালে তিনি পরাজিত হন। পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের পদত্যাগের পর ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে তিনি আবার সংসদ সদস্য হন। আসনটি বারবার শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়ায় কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, দলীয় প্রার্থীকে সরিয়ে নেওয়ায় এবার নৌকার সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়া কঠিন হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আলোচিত-সমালোচিত ইউটিউবার হিরো আলমের কাছে উপনির্বাচনে হারতে হারতে জিতে গেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য। যিনি হিরো আলমের সঙ্গে ভোটের মাঠে শক্ত লড়াই করতে পারেন না, তিনি কীভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হকের (বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য) সঙ্গে লড়াই করবেন? তবে রেজাউল করিম দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গেই থাকবেন।
আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া হেলাল উদ্দিন কবিরাজ নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি নেতা-কর্মীদের কষ্ট না পাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা সবাইকে মানতে হবে।