চিকিৎসক দেখাতে বের হয়ে সড়কে প্রাণ গেল শিশুর, হাসপাতালে ভর্তি আহত মা

পিকআপের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে–মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা। আজ সোমবার দুপুরে বগুড়ার কুন্দারহাট হাইওয়ে থানায়
ছবি: প্রথম আলো

স্ত্রী-পুত্রের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইট ধরতে ঢাকায় রওনা হয়েছিলেন প্রবাসী তানসেন আলী। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিন বছরের ছেলে আবদুল আলিমকে নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে বের হন মা সুমি বেগম। কিন্তু তাঁদের আর চিকিৎসক দেখানো হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হয়েছেন আলিম। আহত সুমি বেগম কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের শয্যায়। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফিরছেন শোকাহত বাবা।

আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু আবদুল আলিমসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তাঁর মা সুমি বেগম, নানা শহিদুল ইসলামসহ (৪৫) পাঁচজন। তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর গ্রামের প্রবাসী তানসেন আলীর সঙ্গে বিদেশ থেকেই মুঠোফোনে পরিচয় হয়েছিল সুমি বেগমের। বিয়ের পর নন্দীগ্রাম উপজেলার হাটধুমা গ্রামে বাবার বাড়িতেই থাকতেন সুমি। স্বামী তানসেন আলী মালয়েশিয়া থেকে আসা–যাওয়া করতেন। তিন বছর আগে সংসার আলো করে জন্ম নেয় ছেলে আবদুল আলিম। তানসেন কিছুদিন আগে দেশে ফেরেন। আজ মালয়েশিয়ার ফ্লাইট ধরার জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান তিনি। রাত ১২টার পর বিমানে ওঠার কথা ছিল তাঁর।

আরও পড়ুন

এদিকে শিশু আবদুল আলিম অসুস্থ হয়ে পড়ে। মা সুমি বেগম চিকিৎসক দেখাতে আলিমকে নিয়ে রওনা দেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পথে। সঙ্গে ছিলেন শিশুর নানা হাটধুমা গ্রামের শহিদুল ইসলামও। সকাল আটটার দিকে নন্দীগ্রাম থেকে বগুড়াগামী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে পড়েন তাঁরা। শিশু আলিম বসে ছিল মায়ের কোলে। পাশের আসনে নানা শহিদুল এবং অন্য এক যাত্রী।

দুর্ঘটনার পর বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি শহিদুল ইসলাম বলেন, সুমির কোলে বসে ছিল আবদুল আলিম। হঠাৎ সামনে পিকআপ ভ্যান চলে আসে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দ। আলিম মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে। এরপর আর কিছুই মনে নেই তাঁর।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বাবা তানসেন আলী ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন বগুড়ায়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানসেন বলেন, ‘অসুস্থ ছেলেকে আদর করে বাড়ি থেকে ঢাকায় এলাম মালয়েশিয়ার ফ্লাইট ধরতে। সেই আদর শেষ আদর হয়ে গেল! এই শোক সামলাব কীভাবে?’

‘মোবাইলটা হামার বাবার জন্য কাল হলো’

নিহত কলেজছাত্র মিনহাজুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

এ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আরেকজন হলেন কলেজছাত্র মিনহাজুল ইসলাম (১৯)। তিনি নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার নামুইট মহল্লার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে। নন্দীগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে। রাজশাহীতে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতেন। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

বাবা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার বড় মিনহাজুল। গতকাল রোববার রাজশাহী থেকে বাড়ি আসে। আজ সকালে নষ্ট মুঠোফোন মেরামত করার জন্য বাড়ি থেকে বগুড়ার উদ্দেশে বের হয়। সিএনজি অটোরিকশায় ওঠার ১০ মিনিটের মধ্যে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মিনহাজুল।

ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় শোকাহত মা তানজিলা খাতুন। আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘মোবাইলটা হামার বাবার জন্য কাল হলো। মোবাইল ঠিক করবার যায়্যা হামার বাবাক জীবন হারানো লাগল।’

নিহত অন্য জন হলেন নন্দীগ্রাম উপজেলার দামগাড়া গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চালক হেফাজুল ইসলাম (৪৫)।

কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাসনাত আলী বলেন, অটোরিকশা এবং পিকআপ ভ্যান পুলিশ হেফাজতে আছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।