রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও চুরি, তারসহ আটক ২

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় তামার তারসহ দুই তরুণকে আটক করে আনসার ব্যাটালিয়ন
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও চুরির ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেলে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় তামার ১৫ কেজি তারসহ দুই তরুণকে আটক করেছেন খুলনা-৩ আনসার ব্যাটালিয়নের রামপাল ক্যাম্পের সদস্যরা।

আটক দুই ব্যক্তি হলেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মো. তানভির (২৪) ও চাঁদপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ শেখ (২৩)।

আনসার ব্যাটালিয়নের ভাষ্য, আটক দুজনই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চোর চক্রের সদস্য। তাঁরা ওই কেন্দ্রের শ্রমিক বা কোনো কাজে যুক্ত নন। এই চোর চক্রের একটি অংশের সদস্যরা তার কেটে তাঁদের (আটক দুজন) দিত। তাঁরা মোটরসাইকেলে এই তার বাইরে নিয়ে যেতেন।

এ ঘটনায় রামপাল থানায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে আনসার ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক চন্দন দেবনাথ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ তামার তার পাচার করা হবে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেখানকার সাইলো এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকজনের একটি দলকে দেখে ধাওয়া করেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে তার কাটা চক্রের সদস্যরা পালিয়ে গেলেও দুটি মোটরসাইকেল, ১৫ কেজি তামার তারসহ দুজনকে আটক করতে সক্ষম হন তাঁরা।

আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে তার ছাড়াও দুটি স্মার্টফোন, তিনটি ক্রেডিট কার্ড ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জব্দ করা মালামালসহ আটক দুই তরুণকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ নিয়ে গত ৯ মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে চুরি যাওয়া অর্ধলক্ষাধিক টাকা মূল্যের তামার তারসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ এবং চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৫ জনকে আটক করেছেন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এ ছাড়া একই সময়ে র‌্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে আরও ৫০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ১৪ জানুয়ারি কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। মূল কেন্দ্রের সুরক্ষিত এলাকার তালাবদ্ধ কয়লা টেস্টিং ল্যাব থেকে চুরি হয়ে গেছে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের কয়লার মান পরীক্ষার যন্ত্র। তবে ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কেন্দ্রটির নিরাপত্তায় ১৫০ আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য, ৩০ জন সাধারণ আনসার সদস্য, ১৭ জন পুলিশ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভেলের নিজস্ব সিকিউরিটি সার্ভিসের ৭৮ কর্মী ও জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের ১৮ জন কর্মী রয়েছেন।

ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯১৫ একর জায়গার মধ্যে ৪৫০ একর দেয়ালবেষ্টিত সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এই প্রাচীরে ৯টি ফটক। এর বাইরে দুই কিলোমিটার নদীর সীমানাসহ বাকি জায়গা প্রায় অরক্ষিত।

কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর উৎপাদনে যায়। অবশ্য উৎপাদনে যাওয়ার ২০-২২ দিনেই কয়লার স্বাভাবিক মজুত শেষ হয়ে যায়। জরুরি রিজার্ভ কয়লা দিয়ে আরও পাঁচ দিন চালু রাখা হয় উৎপাদন। এর মধ্যে ঋণপত্র খুলে কয়লা আমদানি করা সম্ভব না হওয়ায় উৎপাদন শুরুর ২৭ দিনের মাথায় ১৪ জানুয়ারি সকাল থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।