মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ
১০৪ বছর পূর্তিতে দিনভর প্রাক্তনদের জমজমাট আড্ডা ও খুনসুটি
‘ডাক দিয়েছে আপন প্রান্তর, এসো মিলি প্রাণে প্রাণে’ স্লোগান নিয়ে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ১০৪ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় প্রতিষ্ঠানটির মাঠে এ অনুষ্ঠান হয়।
প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জমজমাট আড্ডা ও খুনসুটিতে অনুষ্ঠানটি যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক বসন্ত কুমার বিশ্বাস।
শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদ্যাপন পরিষদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের তৎকালীন জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী তাঁর মা বিশ্বেশ্বরী রায় চৌধুরীর নামের সঙ্গে মিল রেখে ১৯২০ সালে উপজেলার মধ্যনগর বাজারে মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালে এটি উচ্চবিদ্যালয় এবং ১৯৯৫ সালে এটি কলেজে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠানটির আয়তন ১৩ একর ৭৯ শতক। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন রাকেশ চন্দ্র তালুকদার। অনুষ্ঠান ঘিরে প্রাক্তন ১ হাজার ২৬৩ জন ও বর্তমান ১ হাজার ৬৯৩ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের খোঁজ করছিলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাকিম উদ্দিন (৭৯)। তিনি এখানে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাঁর সহপাঠীদের অনেকেই বেঁচে নেই। তবু যদি কারও দেখা পান, সেই আশায় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসেছেন। অনুষ্ঠানে এসে খুব আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী হোসনে আরা (৬০) বলেন, ‘আমাদের সময় লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক আনন্দ বিনোদন করেছি। সময়ের পালাবদলে এখন তা আর চোখেই পড়ে না।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থী অরবিন্দু রায় (৭৬) বলেন, ১৯৬৫ সালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর্থিক অনটনের কারণে আর এগোতে পারিনি। শিক্ষাজীবনের স্মৃতিকাতর হয়ে তাঁর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আমাকে প্রধান অতিথি করা না হলেও প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে এই অনুষ্ঠানে আসতাম। এসব অনুষ্ঠানে কোলাহল হবে, আড্ডা হবে, ভাববিনিময় হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করি। আমার পক্ষে প্রতিষ্ঠানের জন্য যা যা করণীয়, তা–ই করতে আমি চেষ্টা করব।’ তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নতুন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বন্ধনের জন্য অ্যালামনাই গঠন করার প্রস্তাব করেন।
এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে পাশের ধর্মপাশা উপজেলার ডা. রফিক চৌধুরী হাইস্কুলের স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায়।