সমীরের সুখের সংসার তছনছ, ডেঙ্গুতে স্ত্রী–মেয়ের মৃত্যু

স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস ও মেয়ে প্রতিভা মণ্ডলের সঙ্গে সমীর মণ্ডলছবি : পরিবারের সৌজন্যে

ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সমীর মণ্ডল ও জয়ন্তী বিশ্বাস। ৯ বছর পর তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়; নাম রাখেন প্রতিভা। তাঁদের স্বপ্ন ছিল মেয়ে চিকিৎসক হবে। কিন্তু সমীরের সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক দিনের ব্যবধানে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।

স্ত্রী ও সন্তান হারিয়ে দিশেহারা সমীর মণ্ডল। তিনি জানান, তাঁর সুখের সংসার ভেঙে গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সন্তান হয়নি দীর্ঘদিন। চিকিৎসার পর ২০২২ সালের ১১ জুন মেয়ে প্রতিভার জন্ম হয়। আমার স্ত্রীর স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আমার ছোট মেয়েটার বয়স এখন ছয় মাস। সে–ও এই বয়সে মাহারা হলো। আমি এখন কীভাবে বাঁচব?’

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামের সুকুমার মণ্ডলের ছেলে সমীর মণ্ডল। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। সপরিবার তিনি রাজধানী ঢাকায় থাকেন।

সমীর জানান, চাকরির সুবাদে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ঢাকার মিরপুর-১ টোলারবাগ স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে প্রথমে তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাসের (৩৪) জ্বর আসে। পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর জয়ন্তীর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ১৭ সেপ্টেম্বর মেয়ে প্রতিভারও (৩) ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থার অবনতি হলে ১৮ সেপ্টেম্বর জয়ন্তী ও পরদিন প্রতিভাকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্স (বিআইএইচএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে পিআইসিইউ না থাকায় পরে প্রতিভাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আলাপের এক পর্যায়ে গলা ধরে আসে সমিরের। তবুও তিনি বলতে থাকেন, ‘২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাতটার দিকে চিকিৎসকেরা লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে জয়ন্তীকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে বাঘুটিয়া গ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়। একই গাড়িতে রাত ১১টার দিকে ঢাকায় মেয়ের কাছে ফিরে যাই। কিন্তু ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন পরদিন সোমবার রাত নয়টার দিকে আমার অনেক আদরের মেয়ে প্রতিভাও মারা যায়। পরে মায়ের পাশেই আদরের মেয়ের নিথর দেহটি সমাহিত করা হয়।’  

ডেঙ্গুর কারণে একই পরিবারের মা-মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি গ্রামবাসীদেরও শোকাহত করেছে। এ বিষয়ে আক্ষেপ নিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ডেঙ্গুর কারণে একটি পরিবার নিমেষেই শেষ হয়ে গেল।