বিশ্বশান্তি কামনা করে ইজতেমার আখেরি মোনাজাত সম্পন্ন

আখেরি মোনাজাতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নেন। আজ রোববার সকালে টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকায়ছবি: দীপু মালাকার

আজ রোববার সকাল ৯টার কথা। তুরাগতীরে যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ। গলিপথ থেকে মহাসড়ক, সড়কে থেমে থাকা বাস কিংবা তুরাগের দুই তীরে ভিড়িয়ে রাখা নৌকা—সব জায়গায়ই বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কেউ বসে আছেন, কেউ দাঁড়িয়ে কান পেতে আছেন মাইকের দিকে। সবার অপেক্ষা আখেরি মোনাজাতের জন্য। বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আজ সকালের দৃশ্য ছিল এমনই।

সকাল ১০টায় শুরু হলো সেই কাঙ্ক্ষিত মোনাজাত। মাওলানা জুবায়েরের কণ্ঠ ভেসে এল মাইকে, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়া দেন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের ঈমানকে মজবুত করিয়া দেন। আমরা তওবা করিতেছি। আপনি আমাদের রব, আপনি আমাদের গুনাহকে মাফ করিয়া দেন। হে আল্লাহ, আপনি সব উম্মতকে মাফ করিয়া দেন...।’

মাওলানা জুবায়েরের কথাগুলো চারপাশের লাখো মুসল্লিকে যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল। সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। আবেগাপ্লুত লাখো মুসল্লির কণ্ঠে তখন উচ্চারিত হয় ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনি।

গত শুক্রবার শুরু হয়েছিল জুবায়েরপন্থীদের ইজতেমা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ৩০ মিনিট এগিয়ে তা শুরু হয় সকাল ১০টায়। মোনাজাত শেষ হয় ১০টা ২০ মিনিটে।

এদিকে মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দিকে আসতে থাকেন সাধারণ মুসল্লিরা। তাঁদের অধিকাংশই রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের জেলার। দুপুরের পর থেকেই তাঁরা ইজতেমা মাঠের দিকে আসতে থাকেন। এর মধ্যে আজ জায়গা পাবেন না—এমন ভাবনায় রাত থেকেই তাঁরা অবস্থান নেন ইজতেমার মাঠসংলগ্ন সড়ক-মহাসড়কে। মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। যান চলাচল বন্ধের কারণে হেঁটেই ইজতেমাস্থলে জড়ো হন মুসল্লিরা।

প্রথম পর্বের ইজতেমার শেষ দিনে ভারতের মাওলানা আকরাম হোসেনের বয়ানের মধ্য দিয়ে আজ সকালের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সকাল ১০টায় মোনাজাত শুরু করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জুবায়ের। মোনাজাত শুরু হতেই ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের এলাকায় অন্য রকম এক নীরবতা নেমে আসে। যে অবস্থায় ছিলেন, সেই অবস্থায়ই মোনাজাতে অংশ নেন। লোকসমাগম বেশি হওয়ায় অনেকে ইজতেমা মাঠ থেকে অনেক দূরে ছিলেন। অনেকের কাছে মাইকের আওয়াজও পৌঁছানো কঠিন ছিল। তাই অনেকেই মুঠোফোনে এফএম রেডিও চালু করে বসে পড়েন মোনাজাতে।

তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। শুক্রবার সকালে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার প্রথম পর্ব। এই পর্বে অংশ নিয়েছেন জুবায়েরপন্থীরা। আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো প্রথম পর্বের ইজতেমা। এরপর ২০ থেকে ২৩ জানুয়ারি চলবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। ওই পর্বে অংশ নেবেন সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা।