গ্রামে বসে ড্রোন বানান তরুণ আশির উদ্দিন
২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি উড়োজাহাজের নমুনা ও ২০ থেকে ২৫টি ড্রোন তৈরি করেছেন আশির উদ্দিন। সব কটিই সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করা হয়েছে।
ছয় কক্ষের পুরোনো একটি একতলা ঘর। ঘরের পেছনের দিকের ১৫ বর্গফুটের একটি কক্ষ। সেই কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে আছে উড়োজাহাজ ও ড্রোনের নানা আদল, বৈদ্যুতিক ডিভাইস ও তার। আছে ল্যাপটপ ও সাদা খাতা। সেই সাদা খাতায় আবার নানা নকশা আঁকা। কক্ষটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ল্যাব’।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার একেবারে দক্ষিণে পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুঁইছড়ি গ্রামে অবস্থিত এই ল্যাব স্থানীয় তরুণ আশির উদ্দিনের। এই ল্যাব থেকেই একের পর এক ড্রোন বানিয়ে তাক লাগাচ্ছেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি উড়োজাহাজের নমুনা ও ২০ থেকে ২৫টি ড্রোন তৈরি করেছেন আশির উদ্দিন। সব কটিই সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছি। ১০ কেজি ওজনের একটি ড্রোনের দাম মানভেদে তিন থেকে চার লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের ড্রোন ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। একটি ড্রোন তৈরিতে ৬ জনের টিমের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে
২০১৫ সালে এসএসসি পাস করেন আশির। এরপর চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা শেষ করেন। আশির জানান, এসএসসি শেষ করার পর শখের বশে মোটর দিয়ে খেলনা নৌকা বানানো শুরু করেন তিনি। একদিন ছাদে বসে নৌকা বানানোর সময় দেখেন মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ যাচ্ছে। তখনই এর আদলে ছোট উড়োজাহাজ বানানোর কথা মাথায় আসে। জানান, এরপর অত্যাধুনিক সব উড়োজাহাজের নমুনা তৈরি করতে থাকেন। একপর্যায়ে শুরু করেন ড্রোন বানানো। এলাকার আকাশেই এসবের উড্ডয়ন ও অবতরণের পরীক্ষা করা হয়। তাঁর নির্মাণ করা ড্রোন গোয়েন্দা নজরদারি, যুদ্ধসহ নানা কাজে ব্যবহার করা যায় বলে জানান আশির।
আশির উদ্দিন বলেন, ‘এর মধ্যে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছি। ১০ কেজি ওজনের একটি ড্রোনের দাম মানভেদে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের ড্রোন ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। একটি ড্রোন তৈরিতে ৬ জনের টিমের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।’
শুরুতে নিজের জমানো টাকা দিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বলে জানান আশির উদ্দিন। বর্তমানে নিজের এসব প্রযুক্তিচর্চার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানান তিনি। আশির বলেন, ‘ড্রোন বিক্রি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ ল্যাবে যেমন খরচ হচ্ছে, তেমনি পরিবারকেও দিয়ে সহায়তা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে ১০ থেকে ১৫ জনের দল করে ড্রোন বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তবে এতে সরকারের সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে জানান তিনি।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এভিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জানিয়ে আশির বলেন, ‘আমার কাজ দেখে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের প্রতিষ্ঠানে এভিয়েশন বিষয়ে আমাকে দেড় বছরের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ দেয়। সেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এভিয়েশন বিষয়ে আমার জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে।’
আশির উদ্দিনকে উৎসাহ জোগাতে গতকাল সোমবার বাঁশখালীতে তাঁর ল্যাবে যান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের কয়েকজন নেতা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে সেখানে গিয়েছেন বলে জানান। ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ ব্যানারে আশির উদ্দিনকে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। আশিরের বাবা মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘শৈশব থেকেই আমার ছেলে উদ্ভাবনী নানা কাজে মগ্ন থাকে। তার কাজ দেখে আমাদেরও খুশি লাগে। আমরা তাকে উৎসাহ জোগাই।’
চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের এই উদ্ভাবনী দক্ষতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তরুণদের এমন উদ্ভাবনকে আরও বেশি উৎসাহিত করতে সরকারকে পর্যাপ্ত অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’