জামালপুরে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারী সংসদ সদস্যকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

লাঞ্ছনার বিষয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাতে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা শহরে হোসনে আরার বাসায়
ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের ইসলামপুরে দলীয় আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরাকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন হোসনে আরা।

হোসনে আরা জামালপুর-শেরপুরের সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য। তিনি ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি। তাঁর বাড়ি ইসলামপুর উপজেলায়। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। তিনি দাবি করেছেন, লাঞ্ছিতের মতো কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। আনোয়ার জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের অনুসারী। ঘটনার সময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা নিয়ে গতকাল রাতে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। সভায় অংশ নেন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য হোসনে আরাও।

সংসদ সদস্য হোসনে আরা ওই সভায় ‘লাঞ্ছিত’ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওই সভায় আমি যেখানে বসেছি, তার পাশেই একজন নেতা ছিলেন। তাঁকে আমি বললাম, দেখেন এই যে মিটিংগুলো হয়, কোনো দিনও আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয় না। আমি পাঁচ বছর ধরে মন্ত্রীর (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। ওনার (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে কোনো সময় ঝগড়া-বিবাদ করি নাই। আমি ওনার (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে কেন ঝগড়ায় যাব? আমরা ভাইবোনের মতো মিলে চলি। আমার নেত্রী আমাকে মহিলা এমপি বানিয়েছেন। আর উনি (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) নির্বাচিত এমপি। ওনার সঙ্গে আমার কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা ঝগড়াও নাই। পার্টি অফিসে গিয়ে আমি বলতেছিলাম, এখানে একটার পর একটা মিটিং হয়। আমাকে ফোন করেও কেউ বলে না।’

হোসনে আরা আরও বলেন, ‘তখন আনোয়ার আমাকে বলে, “আপনি কে, আপনাকে কেন বলব? আপনার সবকিছু জানি, আপনার নাড়িনক্ষত্র জানি, কীভাবে এমপি হয়েছেন তা-ও জানি, আপনি আমাদের কাছে এসব গল্প কইরেন না, আপনি কোন দল থেকে আসছেন, সেটাও জানি।”এসবের একপর্যায়ে আনোয়ার আমার হাতের মধ্যে থাপ্পড় মারছে। তখন আমিও টেবিলের এক পাশে থাপ্পড় দিয়েছি। আর আনোয়ারকে বলছি, ‘‘তুমি কী আমার নাড়িনক্ষত্র জানো, এখনই আমাকে বলতে হবে।’’ ঠিক তখনই মন্ত্রী (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) আমাকে বলতেছেন, “আরে, আপনি রাখেন, আপনি একটা কথাও বলবেন না, আমি এখানকার সভাপতি।” তখন আমি বললাম, আপনি (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) এখন এই কথা বলতেছেন। যখন আনোয়ার আমার গায়ে হাত তুলল এবং ধস্তাধস্তি করল, তখন তো আপনি (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) কিছু বললেন না।’

এ বিষয়ে জানতে কথা বলতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার সকালে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য হোসনে আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মুঠোফোন ধরে বলেন, ‘ভাই, এই বিষয়ে আমি আপনাকে পরে ফোন করব।’এই বলে তিনি ফোনটি রেখে দেন। পরে আর তিনি ফোন করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই আলোচনা সভায় কিছুই হয়নি। সভা শুরুর সময় অতিথিদের আসনে আমরা কয়েকজন বসেছিলাম। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য সভায় উপস্থিত হন। তখন আমরা সবাই অতিথির সারি ছেড়ে তাঁদের বসতে আহ্বান জানাই। কিন্তু ওই সংরক্ষিত সংসদ সদস্য অতিথিদের আসনে বসবেন না এবং সাধারণ নেতা-কর্মীদের সারিতে বসবেন। তখন আমি বলছি, বসবেন না কেন? এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে যান এবং বলতে থাকেন তুমি কথা বলার কে? এইটুকুই হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো ঘটনা ঘটে নাই। তাঁকে কোনো লাঞ্ছিতের ঘটনাও ঘটেনি।’

এ বিষয়ে জানার জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খানের মুঠোফোনে ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরে বলেন, ‘আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি। মাইকের শব্দে আপনার কথা বোঝা যাচ্ছে না।’ এই বলে তিনি ফোনটি রেখে দেন।