বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের নয়: ময়মনসিংহের ডিসি
ভাঙার কার্যক্রমে আলোচনায় আসা ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় রোডের পুরোনো বাড়িটি নিয়ে আজ বুধবার সভা করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুফিদুল আলম। সেখানে তিনি বলেন, যে জমি বা বাড়িটি সত্যজিৎ রায় বা তাঁর পূর্বপুরুষের দাবি করা হচ্ছে; সরকারি রেকর্ড ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে কোথাও তাঁদের কারও নাম পাওয়া যায়নি। আরএস রেকর্ডে এটি বাংলাদেশ সরকারের নামে লিপিবদ্ধ।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এটি সত্যজিৎ রায় বা তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি নয়। তাঁরা কখনো এখানে ছিলেন না। আশা করছি, এর মাধ্যমে সবাই সত্যটা জানতে পারবে।’
ময়মনসিংহ নগরে থাকা শশীলজের পেছনের সড়কটির নাম হরিকিশোর রায় রোড। হরিকিশোর রায় ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া জমিদারবাড়ির জমিদার। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ। এ সড়কে প্রাচীন একতলা একটি ভবন ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ব্যবহার করা শুরু করে। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে ঝুঁকি বিবেচনায় সেটিতে আর কার্যক্রম চলছিল না। সম্প্রতি নিজস্ব স্থাপনা নির্মাণের জ্যন্য প্রাচীন বাড়িটি ভাঙা শুরু করে শিশু একাডেমি।
গত সোমবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বাড়িটি ভাঙা সম্পর্কে তথ্য চেয়ে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। সাবিনা ইয়াসমিন বলেছিলেন, ‘রায় পরিবারের ঐতিহাসিক বাড়ি এটি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বাড়িটি এখনো তালিকাভুক্ত না হলেও সত্যজিৎ রায়ের বংশধরের বাড়ি হিসেবে শতবর্ষ প্রাচীন বাড়িটি ছিল। আমাদের জরিপে এসব স্থাপনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারে।’
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয়। এ প্রেক্ষাপটে আজ বিকেল চারটায় ডিসি কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সভার আয়োজন করা হয়। এতে লেখক, গবেষক, সচেতন নাগরিক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও শিশু একাডেমির কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন। আলোচনা শেষে ডিসি মুফিদুল আলম বলেন, ২০০৮ সালে এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির নামে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাদের নামে দলিল সম্পাদিত হয়েছে। তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ভবনটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু করে। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, এটি আসলে সত্যজিৎ রায় বা তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল কি না, সে ব্যাপারে সবাই একবাক্যে বলেছেন, এটি কখনো সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি ছিল না। ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।