‘ভাবছিলাম ছেলে আমার জানাজা পড়াইব, সে-ই তো চইলা গেল’

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে সাইদুলকে হারিয়ে বাবা বাবুল মিয়ার আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

‘ছেলেরে হাফিজি পড়াইছিলাম। ভাবছিলাম, আমি মইরা গেলে ছেলে আমার জানাজা পড়াইব। এহন সে-ই আমাগো ছাইড়া চইলা গেল। আল্লাহ, তুমি তারে না নিয়া আমারে নিলা না কেন?’ গতকাল রোববার এসব বলে বিলাপ করছিলেন গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাইদুল ইসলাম ওরফে রুবেলের বাবা মো. বাবুল মিয়া (৬০)।

সাইদুলের (২৭) বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকায়। তিনি উপজেলার চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিনস লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সাইদুল পবিত্র কোরআনে হাফেজ ছিলেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি স্থানীয় একটি কলেজে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান) পড়ছিলেন।

গত শনিবার রাত ১১টার দিকে কারখানা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন সাইদুল ইসলাম। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মকিষবাথান এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি বাস অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে পাঁচজন নিহত হন। গতকাল জানাজা শেষে সাইদুলকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ছেলেকে হারিয়ে মা মনোয়ারা বেগম পাগলপ্রায়। তিনি বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘ওকে অনেকবার বলেছি আগে লেখাপড়া শেষ কর, তারপর চাকরি করিস। কিন্তু সে কথা শোনেনি। সে বলত, তার কোনো সমস্যা হবে না। চাকরি করেও লেখাপড়া করতে পারবে। এখন ওর লেখাপড়া, চাকরি—কোনোটাই হলো না।’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের একজন কালিয়াকৈর উপজেলার হিজলতলী গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে আতিকুল ইসলাম (৪৩)। তিনি উপজেলার চন্দ্রা ওয়ালটন কারখানার পাশে একটি মুদিদোকান চালাতেন। ব্যবসার কারণে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে তিনি উপজেলার লতিফপুর এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। শনিবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনায় মারা যান।
আতিকুলের মা আয়েশা আক্তারের বয়স ৮০ বছরের ওপরে। ছেলের মৃত্যুতে তিনি বাকরুদ্ধ। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। শুধু অঝরে কান্না করছেন। স্বজনেরা তাঁকে নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালককে আটক করতে অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এখনো ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

আরও পড়ুন