মধুখালীতে আবার বিজিবি মোতায়েন, পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

ফরিদপুরের মধুখালীতে বিজিবির টহল
ছবি: বিজিবির সৌজন্যে

ফরিদপুরে আবার বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় বিজিবি টহল দেওয়া শুরু করেছে। এদিকে মধুখালীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাত নয়টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।

ফরিদপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর বজলুল হুদা। এর মধ্যে দুই প্লাটুন বিজিবি মধুখালীতে ও অন্য সদস্যরা ফরিদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় টহল দেবেন।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে মধুখালীসহ ফরিদপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সোমবার বিজিবি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে একটি মন্দিরের প্রতিমার কাপড়ে আগুন ধরার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মধুখালী ঈদগাহ ময়দানসংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাড়কের পাশে মানববন্ধন হয়। এরপর বিক্ষোভ শুরু হলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মধুখালীর মধুখালী বাজার থেকে বাগাট পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি, ইট জড়ো করে, টায়ার ও গাছের গুঁড়িতে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ প্রেক্ষাপটে নতুন করে ফরিদপুর চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় গতকাল সন্ধ্যা থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেছেন, মধুখালীর পঞ্চপল্লীর ঘটনা নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে আইনি যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। গত সোমবার একটি ফেসবুক আইডি থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ওই আইডি থেকে ফেসবুকে নতুন পোস্ট দিয়ে বলা হয়, এ কর্মসূচি তাঁরা পালন করবেন না। এরপরও গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মধুখালী ঈদগাহের সামনে মহাসড়কে মানববন্ধন পালন করেন। এ কর্মসূচি শেষ করে পুলিশের বাধা অমান্য করে মহাসড়কে উঠে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ডুমাইন এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তাঁরা মধুখালী বাজার, মরিচ বাজার, মালেকা চক্ষু হাসপাতাল, আড়কান্দি সেতু, নওপাড়া মোড়, বাগাট বাজার, গোপঘাট স্ট্যান্ড, মাঝিবাড়ি স্ট্যান্ডসহ মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে নির্মাণশ্রমিকদের হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পুলিশ সুপার বলেন, এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ৮ থেকে ১০ হাজার বিক্ষোভকারীর ওই জায়গাগুলোর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছের গুঁড়ি, ইট ও বাঁশের প্রতিবন্ধক দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা রাস্তার ওপর টায়ার ও গাছের গুঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ শটগান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিন-চারজন পুলিশসহ ১২ জন আহত হন। বিক্ষোভকারীরা তাঁর নিজের এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ির কাচ ভেঙে দেন।

একই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোরর্শেদ আলম জানান, পঞ্চপল্লীর ঘটনা নিয়ে যে তিনটি মামলা হয়েছে, তাতে এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারের তালিকায় ভিডিওতে দেখা দুই ব্যক্তিও আছেন। ভিডিওতে যাঁদের দেখা গেছে, তাঁদের সবার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ আসাদুজ্জামান ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আজম আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার মধুখালীতে পুলিশের ওপর হামলা সরকারি সম্পদ বিনষ্ট ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে মধুখালী থানায়।

জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান বলেন, পঞ্চপল্লীর ঘটনার তদন্তে এডিএমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে ওই কমিটি সময় বৃদ্ধির আবেদন জানালে সময়কাল আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে।