অপহরণ–ধর্ষণের পর গলা টিপে শিশুহত্যা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড

মৃত্যুদণ্ড
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশুকে (১০) অপহরণের পর ধর্ষণ ও গলা টিপে হত্যার মামলায় কানাই মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ রেজাউল করিম এই আদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অভিযুক্ত আসামি কানাই সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়ার বাসিন্দা। রায় দেওয়ার সময় আদালতের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন কানাই। নিহত শিশু একই উপজেলার বাসিন্দা ছিল। সে স্থানীয় সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাজী দিদার উল আলমকে প্রথম আলোকে বলেন, রায় শেষে আদালত কানাইকে জেলা কারাগারে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

মামলা থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটিকে অপহরণের পর ধর্ষণ শেষে গলা টিপে হত্যা করেন কানাই। পর দিন বাঁশঝাড়ে লাশটি ফেলে দেন তিনি। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে সরাইল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছিল। পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে কানাই মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে অপহরণের পর ধর্ষণ শেষে গলা টিপে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন কানাই। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কানাই জানান, তিনি চারটি বিয়ে করেছেন। ভবঘুরে ও বখাটে স্বভাবের কারণে সব স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। দাম্পত্য জীবনে তাঁর কোনো সন্তান নেই। তাঁর একটি মুদিদোকান ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে দোকানের সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। সে সময় শিশুটিকে চকলেট দেন কানাই। পরে তাকে ঘরে নিয়ে যান কানাই। এ সময় ঘরে খাটের কিনারার সঙ্গে মাথায় আঘাত পায় শিশু। একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করেন কানাই। এরপর গলা টিপে হত্যা করে রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে কাঁধে করে শিশুটির লাশ বাঁশঝাড়ে নিয়ে ফেলে দেন।

এই মামলায় ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কানাইকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সরাইল থানা পুলিশ। মামলায় সব সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আজ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ রেজাউল করিম কানাই মিয়াকে ফাঁসি ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।

রায় ঘোষণার পর বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মেরাজুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আসামীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের জানিয়েছেন, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।