জয়পুরহাটে আলুর দাম কমেছে, ক্রেতা খুশি হলেও চিন্তায় চাষিরা

খেত থেকে আলু তুলছেন কৃষকেরা। গত বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বালাইট গ্রামেছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাট জেলার হাটবাজারগুলোয় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। আবার শহরের বাজারগুলোর চেয়ে গ্রামীণ হাটবাজারে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১৫ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি দাম কমে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বাজারে হঠাৎ আলুর দাম কমে হওয়ায় ভোক্তারা খুশি হলেও চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আলুচাষিরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে আলুর যে দাম রয়েছে, তাতে তাঁদের লাভ কিছুটা কম হবে। যদি দাম আরও দাম কমে, তাহলে লোকসান গুনতে হবে।

জয়পুরহাট শহরের মাছুয়া বাজার থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে পাঁচ কেজি আলু কিনে বাসায় ফিরছিলেন রেজাউল করিম। কাঁচাবাজারের সড়কে এই চাকরিজীবী জানালেন, ৪ দিন আগে ৫৫ টাকা কেজি দরে ৩ কেজি আলু কিনেছিলেন। গতকাল বাজারে সেই আলু ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমায় দুই কেজি বেশি আলু কিনেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জয়পুরহাটে ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় ২২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। কৃষকেরা অনেক আগেই আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন। শুরুতেই আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন। এখন সরবরাহ বেশি হওয়ায় আলুর দাম কমছে। তবে গত মৌসুমের চেয়ে এবার আগাম আলুর ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকদের লোকসান হবে না।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জাতভেদে প্রতি কেজি আলু পাইকারিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে সেই আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় আগাম জাতের আলু নিয়ে চাষিরা পড়েছে বেকায়দায়।

আলুচাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষাবাদে খরচ বেড়েছে। অবশ্য এবার ফলনও ভালো হয়েছে। চার থেকে পাঁচ দিন আগে যাঁরা আলু উত্তোলন করে বিক্রি করেছিলেন, তাঁরা সবাই ভালো দাম পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা আলু বিক্রি করছেন, তাঁরা অনেক কম দাম পাচ্ছেন।

কালাই পৌরশহরের বালাইট মোড়ের কৃষক হজরত আলী বলেন, ১০ শতক জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছিলেন। খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকার মতো। খেতে ১৫ মণ আলু হয়েছে। ১ হাজার ১০০ টাকা দরে খেতের সব আলু বিক্রি দিয়েছেন। এতে তাঁর ৫ হাজার টাকার ওপরে লাভ হয়েছে। যদি এক সপ্তাহ আগে আলু তুলতেন, তাহলে প্রায় দ্বিগুণ টাকা লাভ পেতেন।

ক্ষেতলালের মনঝার এলাকার কৃষক সুজাউল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে ১১০ শতক জমিতে ১৬৫ মণ আলু পেয়েছেন। ২ হাজার টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছেন। এতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এখন আরও ১০ বিঘা জতিতে আলু রয়েছে। যেভাবে আলুর দাম কমছে। এতে আলু তোলার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। আবার দেরি করে তুললে আলু নষ্ট হয়ে যাবে। তখন পুরোটায় লোকসান হবে।

আরও পড়ুন

জয়পুরহাট মাছুয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম বলেন, বাজারে বিভিন্ন জাতের নতুন আলু উঠেছে। পাইকারি বাজারে দাম কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম কমেছে। জাতভেদে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। দাম যতই কমবেশি হোক খুচরা বিক্রিতে লাভ একই থাকে।

আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমানে মোকামে চাহিদার তুলনায় আগাম জাতের আলুর জোগান বেশি হচ্ছে। এ কারণে দাম কমছে। আলুর জোগান কমলে দাম আবার বাড়বে। কাঁচাবাজারের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন প্রথম আলোকে বলেন, এখন সবাই আলু তুলছেন। এ কারণে বাজারে আলুর চাহিদা কমছে। প্রথম দিকে প্রতি বিঘায় আগাম আলু খরচা বাদে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এখন বাজারে আলুর দাম কিছুটা কমেছে। এতেও কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করছেন।

আরও পড়ুন