মানিকগঞ্জে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে নারীকে হত্যার দায়ে সাবেক স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আদালতপ্রতীকী ছবি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় এক নারী পোশাকশ্রমিককে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে হত্যার দায়ে একমাত্র আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামির ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অ্যাসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা সিনিয়র দায়রা জজ জয়শ্রী সমদ্দার এই রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বেতিলা গ্রামের মো. নাঈম মল্লিক (৩২)। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে নাঈম মল্লিকের সঙ্গে সাটুরিয়া উপজেলার ফেরাজিপাড়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে সাথীর (২৫) বিয়ে হয়। মাদকসেবী হওয়ায় নাঈম ঠিকমতো কাজ করতেন না। যৌতুকের জন্য সাথীকে মারধর করতেন তিনি। একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেয়ে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর সাথী ঢাকার ধামরাইয়ে একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন।

২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকায় সাথী বাবার বাড়িতে ছিলেন। ওই দিন রাতে মা জালেখা বেগম ও ছোট বোন ইতি আক্তারের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন সাথী। দিবাগত রাত প্রায় ১টার দিকে ঘরের ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সাথীর শরীরে অ্যাসিড ছোড়েন নাঈম। অ্যাসিডে সাথীর মুখ, গলা ও হাত ঝলসে যায়। এ ছাড়া সাথীর মা ও ছোট বোনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে অ্যাসিড লেগে যায়। এরপর রাতেই সাথী এবং তাঁর মা ও ছোট বোনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন চিকিৎসকের পরামর্শে সাথীকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি সাথীর মামা মো. লাল মিয়া বাদি হয়ে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে নাঈমকে আসামি করে সাটুরিয়া থানায় মামলা করেন। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আসামি নাঈমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪-এর মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। এর পর ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাথীর মৃত্যু হয়। এর পর মামলাটির সঙ্গে হত্যার অভিযোগও যুক্ত হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাটুরিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলায় বিচারকাজ চলাকালে ১৩ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে (বাদি) মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মথুর নাথ সরকার ও আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী লাল মিয়া বলেন, ‘এই রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।’