প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে দলীয় পদ ছাড়লেন যুবলীগ নেতা

মো. শাহাদাৎ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. শাহাদাৎ হোসেন। আজ রোববার সকালে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য শাহাদাৎ হোসেন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আজ ছিল নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। শাহাদাৎ হোসেন তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন।

শাহাদাৎ হোসেন তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘আমি শাহাদাৎ হোসেন, অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২২, তৃণমূলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও ভোটারদের অনুরোধে আমার জেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। বিধায় দলের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় আমি দলীয় পদ হতে পদত্যাগ করিলাম।’

শাহাদাৎ হোসেন বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করে তিনি ভোটারদের আশাতীত সমর্থন পেয়েছেন। এ জন্য ভোটারদের অধিকার ও সাধারণ মানুষের সম্মান রক্ষা করতে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। মানুষের সেবাই তাঁর প্রথম ও শেষ কথা। তিনি দলীয় পদ-পদবির লোভী নন।

শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব বলেই দলীয় পদ ত্যাগ করেছি। যদি পদত্যাগ না করতাম এবং দল যদি আমাকে বহিষ্কার করে কোনো চিঠি ইস্যু করত, তাহলে প্রতিপক্ষ ঢালাওভাবে প্রচার করে আমার ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করত। সেই পরিস্থিতির মধ্যে যাতে পড়তে না হয় এবং প্রতিপক্ষ যাতে কোনো ফায়দা নিতে না পারে, সে জন্য আমি নিজেই দলীয় পদে ইস্তফা দিয়েছি।’

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুবলীগের যেকোনো স্তরের নেতা-কর্মী যদি বিদ্রোহী প্রার্থী বা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেন বা প্রচার-প্রচারণা চালান বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, তাহলে তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২২ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ বর্ধিত সভা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় শাহাদাৎ হোসেন ও তাঁর মদদদাতা ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ব্যতীত সদরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। ওই দিনই জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান যুবলীগের ভাঙ্গা, ভাঙ্গা পৌর, সদরপুর ও চরভদ্রাসন কমিটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেন।

নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, সংরক্ষিত সদস্যপদে ১২ জন ও সাধারণ সদস্যপদে ৪৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান পদের চারজনের মধ্যে শাহাদাৎ ছাড়া অন্য তিনজন হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, অধ্যাপক এম এ আজিজ ও মো. নূর ইসলাম সিকদার। এর মধ্যে এম এ আজিজ আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বর্তমানে চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন তিনজন। অন্যদিকে সংরক্ষিত ১২ জনের মধ্যে একজন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ১১ জন ও সাধারণ সদস্যপদে ৪৪ জনের মধ্যে সাতজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার বর্তমানে প্রার্থী আছেন ৩৭ জন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সোমবার প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামী ১৭ অক্টোবর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)  ফরিদপুরের ৯ উপজেলার ৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৮১ জন ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনের অংশ নেওয়া চেয়ারম্যান ও সদস্যপদের প্রার্থীদের ভোট দেবেন।