‌সিলেটে পু‌লিশের আশ্বাসে চার ঘণ্টা পর প‌রিবহনশ্রম‌কিদের অবরোধ প্রত্যাহার

‌সিলেট নগরের প্রবেশপথ অবরোধ করে রেখেছেন প‌রিবহনশ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার নগরের ম‌দিনা মার্কেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো


সিলেটে চার ঘণ্টা পর পু‌লিশের আশ্বাসে প‌রিবহনশ্রমিক নেতারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বৃহস্প‌তিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট মহানগর পু‌লিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তাঁরা এ ঘোষণা দেন। এর পরপরই যান চলাচল শুরু হয়েছে।

বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করেছেন সিলেট মহনাগর পু‌লিশের অতি‌রিক্ত উপক‌মিশনার (গণমাধ্যম) সুদ্বীপ দাস। তি‌নি বলেন, প‌রিবহনশ্রমিকেরা তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেটের দ‌ক্ষিণ সুরমা এলাকার চ‌ণ্ডীপুল এলাকায় প‌রিবহন শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে মহানগর পুলিশের উপক‌মিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, উপক‌মিশনার (দ‌ক্ষিণ) সোহেল রেজাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে প‌রিবহন শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়‌টি দেখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবরোধ প্রত্যাহার ঘোষণা করেন প‌রিবহন শ্রমিকনেতারা।

এর আগে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকনেতাদের ওপর থেকে মামলা প্রত‌্যাহারের দা‌বিতে বৃহস্প‌তিবার সন্ধ‌্যা সাড়ে সাতটা থেকে নগরের প্রবেশমুখগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবরোধ করে রাখেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে নগরজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাতে ঘরে ফিরতে না পেরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন শহরতলিসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।

পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানায় মারধর ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে লেগুনাশ্রমিক মো. শাহাব উদ্দিন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম, জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ, হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল মিয়া মইনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকনেতাদের পক্ষ থেকে শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেটের পাঁচটি এলাকা অবরোধ করে রাখেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে নগরের মধ্যে কোনো যানবাহন ঢুকতে এবং নগর থেকে কোনো যানবাহন বের হতে পারছে না।

গতকাল রাত আটটার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের কিনব্রিজের দক্ষিণ পারে কদমতলী এলাকায় সড়কে বাস দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এতে ওই সেতু পার হয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারছে না। এ সময় পথচারীদের যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে।

হেঁটে দক্ষিণ সুরমার দিকে যাচ্ছিলেন নিজাম উদ্দিন (৫৫)। এ সময় তিনি বলেন, জিন্দাবাজার এলাকায় কাজ শেষ করে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে বন্ধ পেয়েছি। পরে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছি।

অন্যদিকে নগরের টিলাগড়, শাহজালাল ব্রিজ ও মদিনা মার্কেট এবং তেমুখী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখে বিক্ষোভ করছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে থাকতে দেখা গেছে। রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কগুলো অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। নগরের প্রবেশপথগুলো অবরোধ করে রাখায় নগরের অভ্যন্তরেও এর প্রভাব দেখা গেছে। নগরের বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট, মদিনা মার্কেট এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নামে মামলা হওয়ার খবর পেয়ে বিকেলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন শ্রমিকনেতা সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তিনি তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁদের বলেছেন, মামলা হয়েছে, আসামিও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি আরও মামলা দেওয়ার হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘যে অভিযোগে একজন শ্রমিক আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, সেটি বানোয়াট। তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি কেটে দেন।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, পরিবহন শ্রমিকনেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলাগুলো তদন্ত করছে। ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় হঠাৎ করেই পরিবহনশ্রমিকেরা এমনটি করছেন।