দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গায়, শীতে মানুষ ও প্রাণীদের কষ্ট

হাড়কাঁপানো শীতে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের আলোর দেখা মিলছে না। শীতে জবুথবু প্রাণিকুল। আজ বুধবার দুপুরে নওগাঁ পৌরসভার শিবপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গায় আজ বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টায় নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

সর্বনিম্ন আবহাওয়ার তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুর রহমান ও চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান।

হামিদুর রহমান বলেন, নওগাঁয় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ায় গত রোববার থেকে তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি নওগাঁতে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আরও কিছুদিন তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে পারে। আগামী সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষক।

জামিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আজ বেলা তিনটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে। মূলত ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত না হওয়ায় আজ বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।

শীতে মানুষের কষ্ট

নওগাঁয় ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কয়েক দিন ধরে দিনে কিছুক্ষণের জন্য রোদের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তাপ ছড়াতে পারছে না সূর্য। এ কারণে দিনভর শীতে জবুথবু থাকতে হচ্ছে। ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।

নওগাঁ শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালিয়ে সংসারের খরচ জোগান জিয়ারুল ইসলাম (৩৫)। আজ দুপুরে শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা বাজে অ্যাখন সাড়ে ১২টা, তা–ও সূর্যের দেখা নেই। ঠান্ডায় হাত মনে হছে অবশ হয়ে থাকোছে। হ্যান্ডেল ঠিকমতন ধরে রাখা যায় না।’ আরেক অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের কারণে লোকজন বাড়িত থ্যাকে বের হছে না। তাই ভাড়া হছে কম। আবহাওয়া এ রকম থাকলে সংসার চালানোই দায় হবে য্যাবে।’

এদিকে ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২ জানুয়ারি থেকে থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৮২৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগের সপ্তাহে (২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি) ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭০৬।

কষ্টে আছে প্রাণীরাও

শীত অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাণীরাও চরম বিপাকে পড়েছে। গৃহপালিত ও বাণিজ্যিক খামারে পালিত গরু, ছাগল ও মুরগির রোগবালাইয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষক ও খামারিরা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শীতজনিত কারণে প্রাণিকুল খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দেয়। নানা রকম রোগবালাই দেখা দেয়। বিশেষ করে মুরগির রানীক্ষেত, ছাগলের পিপিআর ও গরুর খুরারোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই কর্মকর্তা দাবি করেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর ব্যাপক ভ্যাকসিনেশন করায় ছাগলের পিপিআরের আশঙ্কা তেমন নেই। মুরগি ও গরুর ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।