‘আপনার মতো ফকিন্নির ঘরের সন্তান না, ১১০০ না ২০০০ বিঘা জমির মালিক আমি’

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে যোগ দেন। ফুলের তোড়া নিক্সনের হাতে তুলে দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হকছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্যাহর উদ্দেশে বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন বলেছেন, ‘আমি আপনার মতো ফকিন্নির ঘরের সন্তান না। ১১০০ না ২০০০ হাজার বিঘা জমির মালিক আমি।’ গতকাল বুধবার বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নিক্সনের পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা, জনপ্রতিনিধিদের যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ অভিযোগ করে আসছেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গায় ১১০০ বিঘা জমি দখল করেছেন। এই অভিযোগের উত্তরে নিক্সন চৌধুরী এ কথা বলেন।

নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘এটাকে যোগদান বলে না। এটাকে বলে ব্যর্থ রাজার ব্যর্থ নীতি। যিনি (কাজী জাফরউল্যাহ) ভাঙ্গার মতো জায়গায় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়েও সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন। এই ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নৌকা–অধ্যুষিত এলাকা। আজকে নির্বাচনের ৪৫ দিন বাকি। কিন্তু এই ব্যর্থ নেতার সঙ্গে ৪৫ জন নেতাও নাই। যাদের মঞ্চে নিয়ে উনি বক্তব্য দেন, যাদের বাসায় বাসায় উঠান বৈঠক করেন, তারা সবাই বিখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী।’

কাজী জাফরউল্যাহর উদ্দেশে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘চাচা, অনুরোধ করব দয়া করে সত্য কথা বলবেন। ১১০০ না ২ হাজার বিঘা জমির মালিক আমি। কারণ, আমি আপনার মতো ফকিন্নির ঘরের সন্তান না। টাকা চুরি কইরা পানামার ব্যাংকে পাচার করি নাই। আমরা আপনার মতো দুর্নীতিবাজ না।’

কাজী জাফরউল্যাহর আরেকটি অভিযোগ, নিক্সনের বাড়িতে চিড়িয়াখানা আছে। এ কথা স্বীকার করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাড়িতে পশু-পাখি দেখতে মানুষ শুক্রবার ঘুরতে আসে বউ-বাচ্চা নিয়ে।’

কাজী জাফরউল্যাহর উদ্দেশে নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনি মঞ্চে মিথ্যা কথা বন্ধ করেন। সম্মানিত ব্যক্তিদের নামে বাজে কথা বন্ধ না করলে যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, ওই কাউলিবেড়ায় (কাজী জাফরউল্যাহর বাড়ি) আপনার বাড়ির সামনে থেকে আপনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান। বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, নিক্সনের পক্ষে যোগদানকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক চোকদার মো. শামীম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুবার ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হন মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। এর পর থেকে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে নিক্সনকে ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ভাঙ্গার আজিম নগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে একটি বাগানবাড়ি করেছেন নিক্সন।