গৃহবধূর রক্তাক্ত লাশের পাশে পড়ে ছিল হাতুড়ি, শয়নকক্ষে হাত-পা বাধা ৩ বছরের শিশু

বগুড়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় তিন বছরের শিশুসন্তানকে হাত-পা বেঁধে শয়নকক্ষে আটকে রেখে তাসলিমা আকতার (২২) নামের এক নারীকে হাতুড়ি দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এলাকায় নিজ বাসা থেকে ওই গৃহবধূর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের শিকার তাসলিমা নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার ভাঙারি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে আজ শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ।

ওই গৃহবধূর স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকালে তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। সারা দিন আর ফেরেননি। বিকেলে স্ত্রীর মুঠোফোন বন্ধ পেলেও বিপদ আঁচ করতে পারেননি। এরপর রাত আটটার দিকে বাসায় ফেরেন। এ সময় সুনসান ফ্ল্যাট বাসার ডাইনিং–কক্ষ ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। স্ত্রী-সন্তানের সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালিয়ে দেন। তখন দেখেন, মেঝেতে স্ত্রী তাসলিমার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। পাশেই রক্তমাখা হাতুড়িও পড়ে ছিল।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিন বছরের শিশুসন্তানের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে খুঁজতে থাকেন তিনি। পরে শয়নকক্ষে গিয়ে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় শিশুসন্তানকে পান। তার মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ সময় ভয়ে চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পরে শিশুসন্তানকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। থানায় খবর দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। খুনি তাসলিমার মুঠোফোনও নিয়ে গেছেন।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুজ্জামান বলেন, আশপাশের বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, খুনি একজনই এবং তিনি ওই গৃহবধূর পূর্বপরিচিত। গতকাল বেলা একটা থেকে তিনটার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পূর্বপরিচিত খুনি বাসায় ঢোকার পর ওই গৃহবধূ তাঁকে বিস্কুট-চানাচুর দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এরপর কোনো এক সময় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া র‍্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরাও খুনি শনাক্তে মাঠে নেমেছেন।

তাসলিমার স্বজন মল্লিকা বেগম বলেন, দুপুরে তাসলিমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও মুঠোফোন বন্ধ পেয়েছিলেন। কিন্ত কেউ ওকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারেন, এমনটা মাথায় আসেনি। পূর্বপরিচিত কেউ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা তাঁর।