মানিকগঞ্জে এক দিন বন্ধ থাকার পর চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া বাসগুলো চলছে

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে আসা মানিকগঞ্জের নেতা-কর্মীদের বাস ভাড়া দেওয়ায় শুভযাত্রা পরিবহনের কয়েকটি বাসের চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেন পরিবহননেতারা। সেগুলো গতকাল রাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আজ বুধবার সকাল থেকে আবার যাত্রী পরিবহন শুরু করে বাসগুলো
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ভাড়া দেওয়ায় যেসব বাসের চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আজ বুধবার সকাল থেকে সড়কে চলছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাসের মালিক ও চালকদের কাছে চাবি ও কাগজ বুঝিয়ে দেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বাস মালিক সমিতির নেতারা। এরপর আজ সকাল থেকে বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করছে।

চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়ায় গতকাল দিনভর বাসগুলোর চলাচল বন্ধ ছিল। এতে বাসের মালিক ও শ্রমিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকার পদত্যাগের এক দফা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে গত সোমবার ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে দলটি। সমাবেশে অংশ নিতে মানিকগঞ্জ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন পরিবহনের ৩০ থেকে ৩৫টি বাস ভাড়া করে জেলা বিএনপি। এর মধ্যে প্রায় ১৫টি বাস ছিল শুভযাত্রা পরিবহনের।
বাসমালিক ও চালকেরা জানান, সোমবার রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামিয়ে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে আসার পর শুভযাত্রা পরিবহনের কয়েকটি বাসের চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর গতকাল সকালে আরও কয়েকটি বাসের চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা এ কাজ করেছেন বলে দাবি মালিক ও চালকদের। বিষয়টি কাউকে না জানাতে তাঁরা হুমকি-ধমকিও দেন।

অবশ্য এ ঘটনার বিষয়ে জানেন না বলে গতকাল দাবি করেন জাহিদুল ইসলাম। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘বিএনপির কর্মসূচিতে ভাড়া দেওয়ায় মানিকগঞ্জের বাসের চাবি “জব্দ”’ শিরোনামে প্রতিবেদন ও ছবি প্রকাশিত হয়। এরপর রাত আটটার দিকে চালক ও মালিকদের কাছে চাবি ও কাগজপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আজ সকালে মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, শুভযাত্রা পরিবহনের বাসগুলো সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকাগামী যাত্রীরা সেখান থেকে বাসে উঠছেন।

শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসের চালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাবি ও কাগজপত্র নেওয়ায় গতকাল বাস চালাতে পারি নাই। ইনকামও বন্ধ আছিল। আমাদেরও তো পরিবার আছে, বউ-পোলাপান আছে, সংসার আছে।’

ওই পরিবহনের অপর একটি বাসের মালিক বলেন, ‘কিস্তি ও ধারদেনা করে বাস কিনেছি। রাস্তায় গাড়ি চললে রোজগার হয়। সেই রোজগারে সংসার চলে আর কিস্তির টাকা দিই। গতকাল গাড়ি বন্ধ ছিল, রোজগারও বন্ধ ছিল। কিন্তু কিস্তির টাকা ও সংসারের খরচ বন্ধ ছিল না। আমরা টাকা পাইলে গাড়ি ভাড়া দিতেই পারি। গাড়ি তো কারও টাকায় কেনা না।’

শুভযাত্রা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজিদ হোসেন মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির কর্মসূচিতে যাওয়ায় বাসের কাগজপত্র কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। আজ সকালে সাজিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাসমালিক সমিতির অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা ছিল। এ জন্য দু-একজনের কাছ থেকে চাবি নেওয়া হয়েছে। পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন মালিক ও চালক জানান, শুভযাত্রা পরিবহনের ৭০টির মতো বাস থাকলেও প্রায় ৪০টি বাস চলাচল করে। এসব বাস মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। চাবি ও কাগজপত্র ফেরত পাওয়া বাসগুলোও যাত্রী পরিবহন করছে বলে তাঁরা জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সহসভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, বৈধভাবে বাসের মালিকেরা কাকে গাড়ি ভাড়া দেবেন অথবা কাকে দেবেন না, এটা তাঁদের অধিকার। দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়া দেওয়ায় চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া সমীচীন নয়। সব রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানে থাকাটা জরুরি।