চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় দুই ছাত্রকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ থেকে এটি কার্যকর হবে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আরাফাত রায়হান। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে খালেদ মাসুদ শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আরাফাত রায়হান উপদপ্তর সম্পাদক।
এর আগে গত সোমবার রাত ৯টার দিকে চায়ের দোকানে বসা নিয়ে এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। মারধরের শিকার ওই সাংবাদিকের নাম দোস্ত মোহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও একটি অনলাইন পোর্টালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটি আজ এ প্রতিবেদন জমা দেয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অভিযোগ, চায়ের দোকানে অনুমতি ছাড়া চেয়ার নিয়ে বসার কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন। ১০-১২ জন ছাত্রলীগ নেতা এলোপাতাড়ি তাঁকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। প্যান্টের বেল্ট খুলেও তাঁকে পেটানো হয়।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। ছয় মাসের এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সমিতির নেতারা। সংগঠনটির সভাপতি মাহবুব এ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাসের বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্তে তাঁরা আশাহত হয়েছেন। যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, সেই হিসেবে এ শাস্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভুক্তভোগী সাংবাদিক এখনো হাসপাতালে। এমন লঘু শাস্তির নামে মূলত অপরাধীদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে। আমরা এমন বিচার চাইনি। এটি লোকদেখানো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরাধীদের কাছে জিম্মি মনে হচ্ছে। আমরা এ রায়ে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট না। আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
অপরাধের মাত্রা বিচার করে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবাসিক আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফরিদুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় যথেষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। আর হামলায় মারধরের ব্যাপকতার কথা যতটা বলা হয়েছে ততটা ছিল না।’ চিকিৎসকের প্রতিবেদন নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, ওই চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া আশপাশের দোকানদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।’
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খালেদ মাসুদ আগেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ ছিল। তদন্তের সময় এ নিয়ে কাজ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ফরিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এটি তাদের বিষয়।’