দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে স্কুলে ফিরে কণ্ঠ শুনে সহপাঠীদের চিনতে হচ্ছিল রুবিনাকে

বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের মধ্যে রুবিনা আক্তার। আজ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলি উচ্চবিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

নবম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা আক্তার। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসে সহপাঠীদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠত। গত বছরের ২৯ আগস্ট বিদ্যালয়ে আসার পথে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় সে। সবার সহায়তায় টানা দুই মাসের চিকিৎসা শেষে বেঁচে ফিরলেও হারিয়েছে দৃষ্টিশক্তি। পাশপাশি পঙ্গুত্ববরণ করে রুবিনা।

দীর্ঘ সাত মাস পর আজ বৃহস্পতিবার প্রিয় মুশুলি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েছিল রুবিনা। তখন সহপাঠীরা অন্য এক রুবিনাকে আবিষ্কার করে। সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ। ঘিরে ধরা সহপাঠীদের কণ্ঠস্বর শুনে সবাইকে চিনে নিচ্ছিল রুবিনা।

দুর্ঘটনার আগে রুবিনা আক্তার
ছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

রুবিনা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ধরগাঁও গ্রামের মো. রুবেল মিয়ার মেয়ে। কৃষক বাবার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। বাবার উৎসাহ পেয়ে রুবিনা স্কুলে কখনো অনুপস্থিত থাকত না। প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত।

গত বছরের ২৯ আগস্ট বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় রুবিনা। তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি দ্রুতগামী একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হন। গুরুতর আহত হয় রুবিনা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, দুর্ঘটনায় তার মাথার খুলির সামনের অংশ ভেতরের দিকে দেবে যায়। নাক ও অক্ষিকোটরের হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বাঁ পা-ও ভেঙে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রথমে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে অর্থোপেডিক বিভাগে নিয়ে ভেঙে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু অক্ষিকোটরে হাড় ভেঙে দেবে যাওয়ায় রুবিনা দৃষ্টিশক্তি হারায়।

রুবিনার বাবা রুবেল মিয়া বলেন, গ্রাম ও শহরের হৃদয়বান মানুষের আর্থিক সহায়তায় টানা দুই মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু মেয়েটা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তিনি মেয়েকে রাজধানীর দুটি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা জানাতে পারেননি, কী ধরনের চিকিৎসা পেলে তাঁর মেয়েটা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে।

রুবিনার চিকিৎসার সময় পাশে ছিলেন একই গ্রামের তরুণ মো. আরিফ। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আন্তরিকভাবে রুবিনার চিকিৎসা করেছেন। কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর রুবিনাকে রাজধানীর চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বলা হয়, রুবিনার দৃষ্টিশক্তি ফিরবে না। ফলে পঙ্গু ও দৃষ্টিহীন মেয়েটিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার।

আজ দুপুর ১২টার দিকে মুশুলি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রবেশপথে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়। রুবিনার আসার খবর পেয়ে সহপাঠীরা তাকে ঘিরে ধরেছে। সাত মাস পর কাছে পেয়ে সহপাঠীরা তাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করছে। কণ্ঠস্বর শুনে রুবিনা সহপাঠীদের নাম ধরে কাছে ডেকে নিচ্ছিল। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল। কিন্তু প্রাণোচ্ছল রুবিনার দৃষ্টিশক্তি হারানো ও পঙ্গু হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছিল না সহপাঠীরা।