ড্রেজারডুবিতে মৃত আটজনের বাড়ি পটুয়াখালীর চর জৈনকাঠিতে মাতম
হাসিনা বেগমের দুই সন্তান শাহিন মোল্লা (৩৮) ও ইমাম মোল্লা (৩২)। দুই ভাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ড্রেজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসারের অভাব–অনটন ঘুচানোর চেষ্টা করছিলেন। এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে একই ড্রেজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন তাঁদের চাচাতো দুই ভাই মাহমুদ মোল্লা (৩২) ও তারেক মোল্লা (২২) এবং তাঁদের এলাকার আরও চারজন আল-আমিন (২৫), বাসার হাওলাদার (৩৫), জাহিদ ফকির (২৮) ও আলম সরদার (৩২)। তাঁদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদরের জৈনকাঠি ইউনিয়নের চর জৈনকাঠি গ্রামে।
এই আটজন পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে কাজ করছিলেন পরিবারে একটু স্বাচ্ছন্দ্য আনার আশায়। আর্থিক স্বস্তি আসেনি। এখন তাঁদের মৃত্যুর পর পরিবারে শুধুই কান্না।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার রাতে মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে তাঁদের বালু তোলার ড্রেজারটি ডুবে যায়। এতে আটজনের মৃত্যু হয়। এ খবরে চর জৈনকাঠি গ্রামে তাঁদের পরিবারগুলোতে মাতম চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে শাহিন মোল্লাদের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। এই বাড়ির চারজন মারা গেছেন। লোকজন বাড়িতে গেলেই শাহিনের মা হাসিনা বেগম চিৎকার করে তাঁর দুই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। বুক চাপড়ে বলছেন, ‘কই, আমার বুকের মানিকরা কই?’ শাহিনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী খাদিজা নাবালক তিন সন্তানকে নিয়ে শুধু চোখের পানি ফেলছেন।
শাহিনের বাবা আনিচ মোল্লা বলেন, তাঁর ছোট ছেলে ইমাম হোসেন তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন। নতুন বউকে এখনো বাড়িতে তুলে আনা হয়নি। ইচ্ছা ছিল, সবাই মিলে আনন্দ করে নতুন বউকে বাড়িতে আনা হবে। ড্রেজার ডুবে সব শেষ হয়ে গেল।
শাহিনের মেজ ভাই মো. এনায়েত মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহিন ও ইমামের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ঝড়ের মধ্যে তাঁরা ভালোই ছিলেন বলে বলেছিলেন। পরে রাত নয়টার দিকে তাঁদের বন্ধু একই এলাকায় আরেকটি ড্রেজারে কর্মরত জহিরুল তাঁদের দুর্ঘটনার খবরটি জানান।
জৈনকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ সৈয়দ মহসিন বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। এ ঘটনায় পুরো ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পটুয়াখালীর এই আট শ্রমিক সৈকত-২ নামে একটি ড্রেজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে নয়জন শ্রমিকসহ ড্রেজারডুবির ঘটনা ঘটে। ড্রেজারটিতে থাকা ৯ শ্রমিকের মধ্যে মো. সালাম নামের এক শ্রমিক সাঁতরে কিনারে আসতে পারলেও বাকি আটজন আটকা পড়েন। বেঁচে ফেরা শ্রমিক মো. সালাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউ ওঠায় তাঁদের সৈকত-২ নামে ড্রেজারটি ডুবে যায়।