জেলখানায় বসে ডাকাতির পরিকল্পনা, ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার ৬
চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দিনাজপুর জেলা কারাগারে ছিলেন আবদুর রহিম ওরফে পোড়া রহিম (৬৮)। সেখানে অপর একটি চুরির মামলায় জেলে ছিলেন আবদুল আলিম (৪০)। রহিমের বাড়ি সদর উপজেলায় আর আলিমের বাড়ি হাকিমপুর উপজেলায়। জেলখানাতেই দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে।
জেলাখানায় আবদুর রহিমের সঙ্গে আলাপকালে আবদুল আলিম বলেন, হাকিমপুর উপজেলা পৌর শহরে গণেশ প্রসাদ সাহা নামের এক ব্যক্তির চালকল আছে। ছাড়া পেলে সেখান ডাকাতি করবেন। মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে। এরপর জেলে বসেই তাঁরা ডাকাতির পরিকল্পনা করেন।
মাসখানেক আগে জেল থেকে ছাড়া পান দুজনেই। শুরু হয় দুজনের মুঠোফোনে যোগাযোগ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ জনের একটি দল গঠন করে ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই চালকলে ডাকাতি করেন। লুট করেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ ঘটনার পর হাকিমপুর থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন মিলের মালিক গণেশ প্রসাদ সাহা। পরে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রথমে ওই দুজনকে শনাক্ত করে পুলিশ। পরে গত বুধবার রাতে ডাকাত দলের ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার একটি প্রতিনিধিদল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতি করার কথা স্বীকার করেছেন তাঁরা। পরে ডাকাতির মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, সরঞ্জাম ও ৯ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ জিন্নাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাকিমপুর সার্কেল) শরিফুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা, কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নুর আলম প্রমুখ।
গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন দিনাজপুর উপশহর এলাকার শামীম ওরফে পবন (৩০), শহরের নিমনগর এলাকার ছেলে বকুল হোসেন (৫০), কসবা পুলহাট এলাকার আবদুস সোহাগ (৩৪) ও চিরিরবন্দর উপজেলার ভাবকী গ্রামের ফরিদুল ইসলাম ওরফে মাসুয়া (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি হাকিমপুর পৌর শহরের মধ্য বাসুদেবপুর এলাকায় মেসার্স ইউনাইটেড রাইস মিলে ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ অপরাধীদের ধরতে তিনটি ইউনিটে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। মূলত এই ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মিলসংলগ্ন মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামের আবদুল আলিম। ঘটনার দিন রাত ২টা ৫০ মিনিটে মিলে প্রবেশ করে ডাকাত দল। মিলের ব্যবস্থাপক সুকুমার চন্দ্র রায় ঘুমিয়ে ছিলেন। অতর্কিত মিলে ঢুকে পড়েন তাঁরা। এ সময় ব্যবস্থাপক ও নৈশ্যপ্রহরীর হাত-পা-মুখ বেঁধে মারধর করে লকারের চাবি নেন এবং সাড়ে তিন লাখ টাকা লুট করে দ্রুত পালিয়ে যান তাঁরা। পুলিশ প্রথমে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। সেই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে তাঁদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে আটক ব্যক্তিদের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।