যশোরে শিশু ও প্রবীণদের এক ছাতার নিচে বসবাসের সুযোগ

প্রায় দুই একর জমির ওপর নির্মিত ‘আমাদের বাড়ি’ নামের একটি সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস। চারতলাবিশিষ্ট ভবনটিতে ১৫০ জন থাকতে পারবেন
ছবি: প্রথম আলো

যশোরে সচ্ছল-অসচ্ছল শিশু ও প্রবীণ—সবার এক ছাতার নিচে বসবাসের অনন্য এক পল্লি চালু হয়েছে। শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া গ্রামে সরকার ও জনগণের অংশীদারত্বে প্রায় দুই একর জমির ওপর ‘আমাদের বাড়ি’ নামে একটি সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস বানানো হয়েছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নিবাসটি বানানো হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ নিবাসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সমন্বিত ‘আমাদের বাড়ি’ উদ্যোগটি বাংলাদেশে প্রথম। যশোরের সন্তান ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক এম এ রশিদ প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিশু ও প্রবীণদের জন্য নিবাসটি বানানো হয়। প্রকল্পে ৮০ শতাংশ সরকার ও ২০ শতাংশ জিএমএসএস ফাউন্ডেশন ব্যয় করেছে। গ্রামীণ পরিবেশে চারতলাবিশিষ্ট ভবনটিতে ১৫০ জন মানুষ থাকতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, নিবাসে বসবাসের জন্য প্রায় ৭০ জনের ডেটাবেজ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এখন ১২ জন অবস্থান করছেন। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৩০ ভাগ বিনা মূল্যে এবং ৭০ ভাগ থাকবে যৌক্তিক মূল্যে। সম্পূর্ণ অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দানশীল ব্যক্তিরা সেখানে অর্থসহায়তা দিতে পারবেন। সহায়তার টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকবে।

আজ শনিবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ নিবাসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো দেশে সরকার ও জনগণের অংশীদারত্বে সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস প্রকল্প বাস্তবায়িত হলো। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আরও গড়ে তুলতে তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, মানুষের জন্য নাটুয়াপাড়া গ্রামে বাবার নামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ‘আমাদের বাড়ি’ নামে সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস গড়ে তুলে আবদুর রশিদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য তিনি হাজার বছর মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। স্বাগত বক্তব্য দেন জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক এম এ রশিদ। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অসীত কুমার সাহা বক্তব্য দেন।

অধ্যাপক এম এ রশিদ বলেন, অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রম নামকরণের মধ্য দিয়ে মানুষকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া হয়। এ জন্য ‘আমাদের বাড়ি’ নামকরণ করা হয়েছে। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গরু ও মাছের খামার, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, ব্যায়ামাগার আছে। প্রবীণ ব্যক্তিরা এখানে থেকে এসব কাজে যুক্ত হতে পারবেন। এর চার পাশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে শিশুরা পড়ালেখা করতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ইসিজি, এক্স-রেসহ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জরুরি প্রয়োজনে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের সুযোগ থাকছে নিবাসীদের।