‘স্যার কইছে বাকি তিনটা বই পরে দিবো’

নতুন বই হাতে পেয়ে তিন ভাই–বোন নিরব মোল্লা, মাহমুদুল হাসান ও খাদিজা আক্তারের উল্লাস। রোববার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরের গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

নতুন বই পেয়ে এক দৌড়ে গিয়ে মাকে আগ্রহভরে দেখাচ্ছিল গাজীপুরের শ্রীপুরের গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিরব মোল্লা (৭), মাহমুদুল হাসান (৮) ও খাদিজা আক্তার (৯)। তবে সব বই না পেয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে তাদের। নীরব, মাহমুদুল ও খাদিজা শ্রীপুরের বহেরারচালা গ্রামের জামান মোল্লা-কল্পনা আক্তার দম্পত্তির সন্তান।

আরও পড়ুন

রাজমিস্ত্রি স্বামীর অসুস্থতায় কল্পনার পরিবারে কষ্টের অভাব নেই। তিন সন্তানকে নিয়ে নতুন বই নিতে স্কুলে এসেছেন তিনি। নতুন বই পাওয়ায় সন্তানদের উচ্ছ্বাস কল্পনাকেও যেন ছুঁয়ে গেছে। তবে মা ও সন্তানের মাঝে কিছুটা উৎকণ্ঠা আছে। বাকি বইগুলো না পাওয়ার উৎকণ্ঠা। বই উৎসবে তারা তিন ভাইবোন তিনটি করে বই পেয়েছে। বাকি আছে প্রত্যেকের আরও তিনটি বই।

সব বই না পাওয়ায় এই একই ধরনের উৎকণ্ঠা দেখা গেছে শ্রীপুরের অন্যান্য সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। চতুর্থ শ্রেণিতে পা রাখা খাদিজা আক্তার নতুন বই হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিল। কয়টি বই পেয়েছ প্রশ্ন করতেই বলে ওঠে, ‘তিনটা বই পাইছি, স্যার কইছে বাকি তিনটা বই পরে দিবো।’ একই শ্রেণির খাদিজার ভাই মাহমুদুল হাসান মাকে প্রশ্ন করছিল, ‘আম্মু, আরো বই দিতো না?’

গোসিংগা ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে বই নিয়ে বাড়ি ফিরছিল স্থানীয় একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোজিনা পারভিন। বই প্রসঙ্গে সে প্রথম আলোকে বলে, ‘এখনো সব বই পাই নাই। অর্ধেক পাইছি। বাকিগুলো কবে দিবে, তা জানি না।’
দেশের প্রায় সব শিক্ষার্থীই এবার সব বই বছরের প্রথম দিন হাতে পায়নি। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিভিন্ন জটিলতার কারণ দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সব বই সরবরাহ না করায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। একই পরিস্থিতিতে শ্রীপুরে রোববার বিকেল নাগাদ প্রাথমিকে প্রায় ৫১ শতাংশ বই বিতরণ হয়েছে।

এসব তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, শ্রীপুরে ১৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৪৫টি কিন্ডারগার্টেনসহ প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫১১টি। এসব বিদ্যালয়ের জন্য মোট বই পাওয়া গেছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩০টি। এর মধ্যে বিকেল নাগাদ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ১০০টি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাপ্ত বইয়ের প্রায় সমানসংখ্যক বই এখনো বাকি আছে। এগুলো শিগগিরই চলে আসবে।

অপর দিকে শ্রীপুরে সাধারণ ও মাদ্রাসাসহ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯৯টি। রোববার বিকেল পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ১২ লাখ ৫৯০টি বইয়ের বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৯০টি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিগগিরই বাকি বইগুলো পর্যায়ক্রমে চলে আসবে। তাঁদের হিসাবে বছরের প্রথম দিন বই পাওয়া যায়নি ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭০০টি।

সব বই বিতরণ করতে না পারলেও শিক্ষা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটবে না বলে মনে করেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহিন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাকি বইগুলো আমরা শিগগিরই পেয়ে যাব। প্রথম দিন সবাই বই না পেলেও পড়াশোনায় কোনো সমস্যা হবে না।’

শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বই পাওয়া নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না। দ্রুত বই পাওয়া যাবে। পাঠদানে কোনো সমস্যা হবে না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি বাকি বইগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অর্ধেকের বেশি বই বিতরণ হয়েছে। বাকিগুলোও শিক্ষার্থীদের হাতে শিগগিরই তুলে দেওয়া হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটবে না।’