বন–টিলা কেটে চাষের জমি 

মাটি কাটা ও বিক্রির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দুটি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সখীপুরে গজারি বন ও টিলা কেটে চাষের জমি বানানো হচ্ছে। গত বুধবার উপজেলার গড়গোবিন্দপুর গ্রামের মেয়রের চালা এলাকায়প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর এলাকায় গজারি বন ও টিলা কেটে চাষের জমি তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি টিলার ওপর থেকে প্রথমে গজারি বন ধ্বংস করে পরে এক্সকাভেটর দিয়ে টিলা কেটে চাষের জন্য জমি দখল করছেন।

তাঁদের দেখাদেখি ওই এলাকার আরও কয়েকজন টিলার ওপর থেকে গজারি বন কাটা শুরু করেছেন। গাছ ও টিলা কাটার ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে মাটি কাটা ও বিক্রির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দুটি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর গ্রামের মেয়রের চালা এলাকায় প্রায় দুই একর জায়গাজুড়ে টিলার মাটি কেটে ফসলি জমির সঙ্গে একাকার করা হয়েছে। ফলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। ওই জমির আশপাশে আরও কয়েকটি টিলার ওপর গজিয়ে ওঠা শাল–গাজারি বন কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি টিলা সরকারি খাসজমিতে হলেও শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় তা স্থানীয় বাসিন্দাদের দখলে রয়েছে। সাধারণত ফসলি জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। এতে দখলদারেরা কৌশল করে প্রথমে টিলার ওপরের গজারি গাছ কেটে পরিষ্কার করছেন। এরপর সুযোগ বুঝে টিলা কেটে ফসলি জমি বানানো হবে। 

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিলা কেটে মাটি সমান করে সেখানে চাষাবাদ করা হবে। পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী, তাঁর ভাতিজা আয়নাল হক ও হেলাল উদ্দিন টিলা কেটে নিচু করে ওই জায়গায় চাষাবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

গত মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান সারা উপজেলায় মাটি কাটার মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেন।
জুলফিকার হায়দার কামাল, উপজেলা চেয়ারম্যান

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন,  এগুলো তাঁরা জমিদারদের কাছ থেকে পত্তন নিয়েছেন। টিলার ওপর কোনো ফসল হয় না। এতে মাটি কেটে ফসলি জমি বানানো হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচাবাজার এলাকার মাটি ব্যবসায়ী মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে মামুন পীর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের বেলায় ওই সব টিলা কাটছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দারিয়াপুর ইউনিয়নের দরগাপাড়া এলাকার টিলা কাটারও অভিযোগ রয়েছে। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে মামুন পীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কখনো খাস ও বনের জমি কাটি না। ব্যক্তিমালিকানাধীন রেকর্ডীয় বৈধ জমির মাটি কেটে ব্যবসা করি।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর দখলীয় টিলার মাটি রাতের বেলায় কাটা প্রসঙ্গে মামুন পীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান সারা উপজেলায় মাটি কাটার মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। 

টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেরাতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর গ্রামে কয়েকটি টিলাতে গজারি বন কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে এসি ল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলেছি।’ সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, এভাবে বন, পাহাড়, টিলা উজাড় হলে বন্য প্রাণী বিলীন হওয়াসহ পরিবেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।  

সখীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনজুরুল মোর্শেদ বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, টিলা কাটা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।