সকাল হলেই পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর যে গ্রাম

বগুড়ার শেরপুরের গোয়ালজানি গ্রামের আমাইলডাঙ্গা বিল। এখানে এখন পরিযায়ী পাখির আনাগোনা। ছবিটি মঙ্গলবার বিকেলে তোলাছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার একটি সরকারি ছোট জলাশয় আমাইলডাঙ্গা বিলে পাঁচ বছর ধরে ঝাঁক বেঁধে আসে পরিযায়ী পাখি। জলাশয়টি শেরপুর শহর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে ছোনকা বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে সুঘাট ইউনিয়নের গোয়ালজানি গ্রামে অবস্থিত।

শীত এলেই এ দেশের হাওর, বাঁওড়, বিল ও জলাশয়গুলোতে দেখা মেলে নানা প্রজাতির হাঁস। এর কিছু পরিযায়ী এবং কিছুসংখ্যক এ দেশের। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে ছোট প্রজাতির হাঁস ‘পাতি সরালি’। এরা ছোট সরালি হিসেবেও পরিচিত। এদের দেহ বাদামি রঙের, গলা লম্বা ও লেজ খয়েরি রঙের।

পরিযায়ী এই পাখিদের শিকার প্রতিহত করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা’র সদস্যরা। তবে বিলে মাছ চাষ করায় অনেকটা পুকুরে পরিণত হচ্ছে এটি। এতে আবাসস্থল হারাচ্ছে পাখিসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব আলী আকন্দ বলেন, ‘এরা দেখতে আমাদের ঘরে পালা হাঁসের মতোই। সারা দিন কিচিরমিচির আর ওড়াউড়ি দেখে মন জুড়িয়ে যায়। সংগঠনের কার্যক্রমে গোয়ালজানি গ্রামের মানুষ এখন বেশ সচেতন। তবে সচেতনতার সঙ্গে পাখির আবাসস্থল রক্ষাও প্রয়োজন।’

সম্প্রতি এক বিকেলে আমাইলডাঙ্গা জলাশয়ে সরেজমিনে দেখা গেল, পাতি সরালির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এই জলাশয়ের চারপাশ। আশপাশের শিশু-কিশোর থেকে বিভিন্ন বয়সীরা এই পাখি দেখতে জলাশয়ের পাশে আসছেন।

জলাশয়ের পাশের তিন নারী বাসিন্দা বলেন, এই জলাশয়ে পাতি সরালি দেখতে আশপাশের অনেকেই আসেন। শীতের শুরুতেই পাখিগুলোকে জলাশয়ে দেখা যায়। ৫ থেকে ৬ মাস থাকার পর জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গেলে তখন পাখিগুলোও দল বেঁধে উড়ে যায়। যত দিন পাখিগুলো থাকে, তত দিন এই পাখির কিচিরমিচির ডাকে গোয়ালজানি গ্রামটি মুখরিত থাকে।

পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা সংগঠনের সভাপতি সোহাগ রায় বলেন, এপ্রিল থেকে অক্টোবর মূলত এদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় এরা প্রাকৃতিক জলাশয়ের কাছে ঝোপঝাড়ে, বড় গাছের কোটরে বাসা তৈরি করে। ৭ থেকে ১১টি ডিম দেয়। ২২ থেকে ২৪ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। প্রজনন মৌসুমে এরা জোড়া হয়ে ছোট–বড় জলাশয়, ডোবা, বিল ও হাওরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে যায়। তবে শীত মৌসুমে এরা দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে বলে বেশি দেখা যায়। পাতি সরালি মূলত দিবাচর প্রকৃতির। তবে সন্ধ্যার পর অনেক সময় দলবদ্ধভাবে কিচিরমিচির শব্দ করে উড়ে বেড়ায়। দিনের বেলা জলাশয় বা জলজ ঝোপঝাড়ে বিশ্রাম নেয়। এদের মূল খাদ্য পানিতে থাকা জলজ উদ্ভিদ, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, শামুক, কেঁচো ইত্যাদি।

একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, শেরপুর উপজেলাকে বন্য প্রাণী অপরাধমুক্ত মডেল উপজেলা গড়তে তাঁরা সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলায় পরিযায়ী পাখি জরিপের পাশাপাশি পাখি কলোনির গ্রামগুলোতে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান জিন্নাহ বলেন, ওই জলাশয়ে পাখি দেখতে এখন গ্রামের অনেকে ভিড় করেন। পাতি সরালি পাখি কেউ যেন শিকার করতে না পারে, এ জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তাঁরা নজর রাখছেন।