সিলেটে ইফতার মানেই আখনি ও পাতলা খিচুড়ি

সুগন্ধি চিনিগুঁড়া কিংবা কালিজিরা চাল এবং মাংস দিয়ে রান্না করা হয় আখনি। ইফতার, ধর্মীয় আয়োজন কিংবা পারিবারিক আয়োজনে সিলেটিদের পছন্দের তালিকায় থাকে খাবারটিছবি: আনিস মাহমুদ

মেহমানদারি কিংবা ঘরোয়া পরিসরে ইফতারে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি সিলেটিদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে। তাই প্রায় বাড়িতেই ইফতারের আয়োজনে অনেকটা ঐতিহ্যগতভাবেই এখন পাতলা খিচুড়ি ও আখনি করা হয়। দোকানেও এসব পদের বিক্রি বেশি।

পাতলা খিচুড়ি ও আখনিকে স্থানীয় ঐতিহ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রায় ৮৯ বছরের পুরোনো কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও গল্পকার সেলিম আউয়াল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফতারে নানা পদের পাশাপাশি এ দুটো পদ থাকবেই। এটা সিলেটে ইফতার আয়োজনে একধরনের রেওয়াজ। এ ছাড়া আদা-কাঁচা মরিচ দিয়ে কাঁচা ছোলার প্রচলনও এখানে খুব বেশি।’

একাধিক রোজদার বলেন, এক দশক ধরে নানা উপাদেয় ও বৈচিত্র্যময় ইফতারের সামগ্রী সিলেটের বাজারে বিক্রি করে আসছে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অতীতের ঐতিহ্য ধরে রেখে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও আখনি, ভুনা খিচুড়ি ও পাতলা খিচুড়ি বাজারজাত করছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পরিবারে অন্যান্য ইফতারির পাশাপাশি এ দুটি পদও থাকে।

গত সোমবার দুপুরে নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, উপশহর, শাহি ঈদগাহ, টিলাগড়, টুকেরবাজার ও হুমায়ুন রশীদ চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় দুপুর থেকেই ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। প্রতিটি দোকানে অসংখ্য ইফতারি পদের পাশাপাশি আখনি ও খিচুড়ি সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য পাতলা খিচুড়ির পাশাপাশি ভুনা খিচুড়িও বিক্রি হচ্ছে।

দোকানিরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি পাতলা খিচুড়ি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি বক্স ভুনা খিচুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। প্রতি কেজি বিফ আখনি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা এবং চিকেন আখনি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোয় দাম এই দামের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে বেশি।

সিলেট নগরের প্রতিটি দোকানে অসংখ্য ইফতারি পদের পাশাপাশি আখনি সমানতালে বিক্রি হয়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী রেস্টুরেন্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আহমেদ বলেন, প্রতিবছরই রোজদারদের পছন্দের শীর্ষে থাকে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি। এখন তাঁদের রেস্টুরেন্টে গড়ে ৬০ কেজি চিকেন আখনি, ৮০ থেকে ১০০ কেজি বিফ আখনি এবং ৫০ থেকে ৬০ কেজি পাতলা খিচুড়ি তৈরি করা হয়। রোজার কয়েক দিন গেলে এ দুটো পদের চাহিদা আরও বাড়বে।

বেলা দুইটার দিকে পানসী রেস্টুরেন্টে ইফতারি কিনতে আসেন বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমদ (৪৫)। তিনি বলেন, কয়েকজন মেহমানকে তিনি দাওয়াত দিয়েছেন। বাসায় হরেক পদের ইফতারি রান্না হয়েছে। এর বাইরে কিছু পদ কিনতে বাজারে এসেছেন। ঘরে পাতলা খিচুড়ি রান্না হয়েছে, রেস্টুরেন্ট থেকে বিফ আখনি কিনেছেন। আখনি কিংবা খিচুড়ি ছাড়া তিনি ইফতারি চিন্তাই করতে পারেন না।

হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকার এক ভ্রাম্যমাণ ইফতারের সামগ্রী বিক্রেতা বলেন, তাঁর এখানে যেসব পদ বেশি বিক্রি হয়, এর মধ্যে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি শীর্ষে আছে। খিচুড়ি কিংবা আখনি না হলে সিলেটে যেন ইফতারই হয় না। তাই বাসাবাড়ির পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও এ দুটি পদের কদর আছে।