বন্য হাতির আক্রমণের ভয়ে আধা পাকা ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা
ধারদেনা করে সীমান্তসংলগ্ন এক একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পাথরভাঙার শ্রমিক জুলহাস উদ্দিন (৫৫), ফলন হয়েছে ভালোই। ধান পাকতে লাগবে আরও সপ্তাহখানেক সময়। কিন্তু এর আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার দুই ছেলে ও দুজন কৃষিশ্রমিক নিয়ে খেতের আধা পাকা ধান কেটে নেন জুলহাস উদ্দিন।
কারণ জানতে চাইলে জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘উপায় নাই। আত্তির (হাতির) ডরে আধা পাহা ধান কাডুন লাগতাছে। না কাডলে যেকোনো সুমু আত্তি সব ধান এক মুহূর্তেই সাবাড় কইরা দিব।’
কেবল জুলহাস উদ্দিন নন, বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকার শতাধিক কৃষক খেতের আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। হাতির পালকে প্রতিরোধ করতে তাঁরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও গ্রামের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ১৫০ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন শতাধিক কৃষক। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু জমির পশ্চিমে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চৌকিদার টিলা ও বুরুঙ্গায় পাহাড়ি জঙ্গলে ৫ দিন ধরে ৩৫-৪০টি বন্য হাতির একটি পাল অবস্থান করছে।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাহাড় থেকে মধুটিলা ইকোপার্ক ও পূর্ব শমশ্চূড়া এলাকায় হাতির পাল ধানখেতে নেমে আসে। টের পেয়ে এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে হাতির পালটি আবার জঙ্গলে চলে যায়। পরদিন বুধবার সকাল থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের জমি থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।
নাকুগাঁও গ্রামের পাথরভাঙা শ্রমিক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তিনি দেড় একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। ফসল পাকতে ও কাটতে আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় দরকার। কিন্তু হাতির আক্রমণের ভয়ে নিরুপায় হয়ে আধা পাকা ফসল কেটে আনতে বাধ্য হয়েছেন। একই গ্রামের কৃষক মো. নুরুজ্জামান বলেন, তিনি তাঁর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ৫০ শতাংশ জমির আধা পাকা ধান কেটে বাড়িতে এনেছেন। ধান পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তা হাতির পেটে যাবে বলে মন্তব্য করেন এই কৃষক।
বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাতির পালটি পাঁচ দিন ধরে উপজেলার বুরুঙ্গা, চৌকিদারটিলা ও ডালুকোনা পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। তাই ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের খেত থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। যদি হাতির আক্রমণে ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। হাতি রক্ষায় তাঁদের নজরদারি আছে।