শরীয়তপুরে গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখম, টাকা ছিনতাই

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় গনি সিকদার (৫৫) নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। বুধবার সকাল আটটার দিকে নড়িয়া পৌরসভার পশ্চিম লোনসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

আহত গনি সিকদার নড়িয়ার মোক্তারের চর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকা প্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন গনির স্ত্রী। গনি সিকদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, গনি সিকদার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলীর (ঈগল প্রতীক) সমর্থক ও ভোটকেন্দ্রের এজেন্ট ছিলেন। ওই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীম।

নড়িয়া থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গনি সিকদার বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামে গরু কেনাবেচার কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে চাচাতো ভাই আবদুল আলী সিকদারের জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সময় ওই বিরোধের সালিস হয়েছে। বুধবার সকালে গনি সিকদার গরু কেনার জন্য দুই লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সকাল আটটার দিকে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে নড়িয়া পৌরসভার পশ্চিম লোনসিং এলাকায় পৌঁছালে আবদুল আলী সিকদার, তাঁর ছেলে আশিক সিকদার, মোরশেদ সিকদারসহ কয়েকজন হাতুড়ি ও রড দিয়ে গনিকে মারধর করেন। গনির কাছে থাকা টাকাও তাঁরা ছিনিয়ে নেন।

পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আতিকুর রহমান বলেন, শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করার কারণে ডান পায়ের হাড়ের দুটি স্থান ভেঙে গেছে। আরেক পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, গনি সিকদার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আলীর জন্য কাজ করেন। তিনি নির্বাচনের দিন মোক্তারের চর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চেরাগ আলী ব্যাপারী কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আর যাঁদের বিরুদ্ধে গনি সিকদারের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে, তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীমের নৌকা প্রতীকের সমর্থক।

তবে গনি সিকদারের স্ত্রী চন্দ্রবান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল আলী সিকদারের সঙ্গে জমি নিয়ে তাঁদের পরিবারের বিরোধ রয়েছে। ওই ঘটনার জেরে তিনি ও তাঁর ছেলেরা মিলে তাঁর স্বামীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে রাস্তার পাশে ফেলে রাখেন। প্রতিবেশী শোহরাব ব্যাপারী তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। তাঁরা নির্বাচনে ঈগল প্রতীকের সমর্থক ছিলেন। আর হামলাকারীরা নৌকার সমর্থক। নির্বাচনের পর তাঁরা সুযোগ বুঝে এ হামলা চালিয়েছেন।

মোক্তারের চর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাদশা শেখ বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে গনি সিকদার এবং তাঁর ভাই ও চাচাতো ভাইদের বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধের কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে আবদুল আলী সিকদার, তাঁর ছেলে আশিক সিকদার ও মোরশেদ সিকদার এলাকা থেকে পালিয়েছেন। এলাকায় গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

নৌকা প্রতীকের নির্বাচন সমন্বয়ক ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো সহিংসতার ঘটনা যেন না ঘটে, সেই বার্তা দলীয় নেতা-কর্মীদের দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত বিরোধের জেরে হামলা করতে পারে। যাঁরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরা দলের কেউ নন। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তাই মামলা হয়নি।