ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা রুমা, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু

রুমা বিশ্বাস
ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুমা বিশ্বাস। এর মধ্যেই গতকাল বুধবার তিনি স্নাতকোত্তরের মানোন্নয়নের পরীক্ষায় বসেন। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রুমা। এরপর স্থানীয় ক্লিনিক ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ঘুরে তাঁকে নেওয়া হয় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

রুমা বিশ্বাস (২৬) রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের পারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী লিটন ঘোষ পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাঁরা রাজবাড়ী শহরের ভাজনচালায় ভাড়া করা বাড়িতে থাকতেন। রুমা রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পারুলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লিটন ঘোষের বাড়িজুড়ে শোকের ছায়া। স্বজন ও প্রতিবেশীরা এদিক–সেদিক বসে আছেন। রুমার সৎকার শেষে দুপুর ১২টার পর বাড়িতে আসেন লিটন। এ সময় তিনি খুব বিমর্ষ ছিলেন। কথা বলতে গিয়ে বারবার চোখ মুছছিলেন তিনি।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা রুমা বিশ্বাসের সঙ্গে লিটনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁদের সংসার ভালোভাবেই চলছিল।

লিটন ঘোষ বলেন, রুমার পড়াশোনা শেষ না হওয়ায় বিয়ের পর তাঁরা সন্তান নেননি। সংসার ও পড়ালেখা দুটোই একসঙ্গে চালাচ্ছিলেন রুমা। এখন পড়াশোনা শেষের দিকে হওয়ায় তাঁরা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আগামী ২৫ আগস্ট ছিল সন্তান প্রবসের নির্ধারিত সময়। তাঁদের ছেলে সন্তান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেল।

পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েক দিন আগে রুমার শরীরে জ্বর আসে। রোববার রাজবাড়ী শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এর পর থেকে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার সময় রুমার রক্তে প্লাটিলেটের অবস্থা ভালো ছিল। প্লাটিলেটের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার।

গতকাল রুমার মানোন্নয়ন পরীক্ষা ছিল। রাজবাড়ী শহরের ডা. আবুল হোসেন কলেজ কেন্দ্রে তিনি পরীক্ষা দিতে আসেন। পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিটনকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানানো হয়। এরপর তিনি রুমাকে শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ফরিদপুর পাঠানো হয়। তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তির কিছু সময় পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান।

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রচনা ব্যানার্জী বলেন, ‘রুমা আপু আমার সিনিয়র ছিলেন। আমার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি অসুস্থ ছিলেন। রাজবাড়ী শহরের ডা. আবুল হোসেন কলেজ কেন্দ্রে আমারও পরীক্ষা ছিল। তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’

এর আগে গত শুক্রবার ভোরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের আগমাড়াই গ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়। রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত জেলায় ৪১৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন। তাঁদের মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় নয়জন, পাংশায় চার, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ছয় ও গোয়ালন্দ উপজেলায় তিনজন।

রাজবাড়ীর দুজন নারীর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন। তিনি বলেন, দুজনই ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। একজনের বাড়ি সদর উপজেলায় ও আরেকজনের বাড়ি বালিয়াকান্দি উপজেলায়।