সহকর্মীরা কফিনে দিলেন ফুল, রাতে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হলো ওসি আল–আমিনকে

শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ওসি আল–আমিনের কফিনে ফুল দিয়ে তাঁকে শেষ বিদায় জানান জেলা পুলিশের সহকর্মীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ লাইনস মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিনকে (৪৫) বরিশালের মুলাদি উপজেলার কাচিচর গ্রামে তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা বেলায়েত হোসেনের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। শরীয়তপুর ডিএসবির পরিদর্শক কামরুল হাসান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে আজ সন্ধ্যায় শরীয়তপুর পুলিশ লাইনস মাঠে ওসি আল-আমিনের মরদেহ নেওয়া হয়। জেলা পুলিশের কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানান। সেখানে জানাজা শেষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আল-আমিনের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাজিরা থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আল-আমিনের মরদেহ দেখতে পান সহকর্মীরা। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের একটি দল সন্ধ্যায় মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিন রাতেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উজ জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর তাঁর বড় ভাই আবুল কালাম বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

জাজিরা থানার ওসি আল–আমিন
ছবি: সংগৃহীত

আজ সকালে সিআইডির অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের বিশেষজ্ঞ দলের উপস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আল-আমিনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ শরীয়তপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইনসে আনা হয়। সন্ধ্যায় সেখানে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম আল-আমিনের মরদেহে ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানান। শরীয়তপুর জেলা পুলিশে কর্মরত আল-আমিনের সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁকে শেষবিদায় জানান।

আল-আমিনের মরদেহের সঙ্গে পুলিশ লাইনসে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী, দুই শিশুকন্যা ও বড় ভাই আবুল কালাম। আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ জানিয়েছে আল-আমিন হতাশায় ভুগছিল, এ কারণে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমরা কোনো হতাশায় ভোগার কথা জানতাম না। সে পারিবারিকভাবে কোনো বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে তার কর্মস্থলে কাজের চাপের কথা বলত। জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের চাপের কথাও সে বলেছে। এখন আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত হবে। তারপর বোঝা যাবে, তার মৃত্যু কেন হয়েছে। আমরা অনুরোধ ও দাবি করব, তদন্তপ্রক্রিয়াটি যেন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে করা হয়।’

যমজ দুই মেয়ের সঙ্গে জাজিরা থানার ওসি আল–আমিন
ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একজন সহকর্মীকে এভাবে বিদায় জানাতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এর বাইরেও তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে। তারপরও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।’

আল-আমিন বরিশালের মুলাদি উপজেলার কাচিচর গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে। জাজিরা থানা সূত্র জানায়, আল-আমিন ২০০৭ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি জাজিরা থানায় বদলি হয়ে আসেন। এর পর থেকে থানা ক্যাম্পাসের চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন। গতকাল সকালে তিনি থানায় তাঁর কার্যালয়ে না এলে ওই থানার এক কনস্টেবল বেলা ১১টার দিকে তাঁকে ফোন করে কিছু জরুরি নথিতে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেন। তখন ফোন ধরে ওসি আল-আমিন পরে স্বাক্ষর করবেন বলে ওই পুলিশ সদস্যকে জানিয়ে ফোন রেখে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর তিনি তাঁর কার্যালয়ে না আসায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুস সালাম দ্বিতীয় তলায় ওসির কক্ষে যান। তখন কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে জানালার গ্রিলের সঙ্গে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তখন বিষয়টি শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে জানানো হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জাজিরা থানায় ছুটে যান। রাতে জাজিরা থানা পরিদর্শন করেন পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি, অপরাধ) মোস্তাফিজুর রহমান।