চোর ধরতে রুটিপড়া খাওয়াতেন কথিত কবিরাজ, অবশেষে ধরা

মাদারীপুরে গ্রেপ্তার কথিত কবিরাজ ইস্রাফিল শেখ। সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

২০ বছরের বেশি সময় ধরে কবিরাজি করতেন ইস্রাফিল শেখ (৩৬)। শহর কিংবা গ্রামগঞ্জে কোথাও চুরি হলেই চোর ধরতে কথিত সমাধান দিতেন তিনি। তবে চোর ধরার কোনো নজির না থাকলেও কবিরাজ রুটিপড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা।

সম্প্রতি ইস্রাফিলের দেওয়া রুটিপড়া ও ডিমপড়া খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কথিত কবিরাজ ইস্রাফিল শেখকে গ্রেপ্তার করে।

আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম। গ্রেপ্তার কথিত কবিরাজ ইস্রাফিল শেখ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ১৫ দিন আগে কালকিনির রামচন্দ্রপুর বাজার এলাকায় ব্যবসায়ী দুলাল শিকদার ও মামুন শিকদারের দোকানে চুরি হয়। এ ঘটনায় চোর ধরতে গতকাল সকালে বাজারের পাশে একটি মাদ্রাসা মাঠে আয়োজন করা হয় রুটিপড়া খাওয়ার। উপস্থিত সন্দেহভাজন অর্ধশত মানুষকে কথিত কবিরাজের দেওয়া একটি করে রুটিপড়া খাওয়ান দুলাল ও মামুন। এ সময় প্রতিবেশী ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামকেও চেতনানাশক মিশিয়ে দুটি রুটি ও একটি ডিম খাওয়ানো হয়। রুটি ও ডিম খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে জাহিদুলকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাহিদুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, কথিত কবিরাজের এমন কাণ্ডে চোর হিসেবে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে থাকেন জাহিদুল ও তাঁর পরিবার। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী জাহিদুলের ভাই সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কথিত কবিরাজ ইস্রাফিল শেখসহ ছয়জনের নামে কালকিনি থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে কালকিনি থানা-পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইস্রাফিলকে গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগী জাহিদুলের ভাই সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুলাল ও মামুন একটি পরিকল্পনা সাজান। তাঁরা দুজনই আমার ভাই ও আমাদের সবাইকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে তাঁরা গোপালগঞ্জ থেকে এক কবিরাজকে এনে ২০ হাজার টাকা দিয়ে রুটিপড়ার সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে আমার ভাইকে খাওয়ান। এর পর থেকে আমার ভাই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। যাঁরা আমার ভাই ও আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করলেন, তাঁদের বিচার চাই আমরা।’

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানিয়েছে, কথিত কবিরাজ ইস্রাফিল শেখ দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চোর ধরার প্রতারণা করে আসছেন। তাঁর দেওয়া রুটিপড়া খেয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন এমন অনেকেই। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চোর ধরার এমন কৌশল অবলম্বন করছেন ইস্রাফিল। বাবা রাজ্জাক শেখের কাছ থেকে প্রতারণার এমন পদ্ধতি শিখেছেন বলে দাবি করেন ইস্রাফিল।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হাসান বলেন, গ্রেপ্তারের পর ইস্রাফিলকে সোমবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওসি আরও বলেন, এ মামলায় শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। গ্রেপ্তার ইস্রাফিলের বিরুদ্ধে এমন প্রতারণার মামলা আগেও হয়েছে। এ চক্রে আরও যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।