টেকনাফে অপহরণের তিন দিন পর যুবককে উদ্ধার
কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার বসতঘর থেকে অপহরণের পর বেলাল উদ্দিন (৩২) নামের এক যুবককে তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনের পাহাড়ি এলাকা থেকে বেলালকে উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় অপহৃত যুবকের চাচাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও গুলি।
পুলিশের দাবি, জায়গাজমি হাতিয়ে নিতে ভাতিজাকে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছেন বেলালের চাচা আমির আহমদ। তিনি এই অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী। বেলালকে রোহিঙ্গা ডাকাত শফিকে দিয়ে তিনি অপহরণ করান। মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে বেলালের পরিবার জমি বিক্রি করলে তিনি অল্প দামে তা কিনে নেওয়ার ফন্দি আঁটেন।
অপহৃত বেলাল উদ্দিন বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী এলাকার আলী আহমদের ছেলে ও কক্সবাজার বার কাউন্সিল ভবনের নিচতলার ফটোকপির দোকানদার। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বেলালের চাচা বাহারছড়ার দক্ষিণ শীলখালীর আমির আহমদ (৫৫), হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালীর আবসার উদ্দিন (৩৩) ও একই এলাকার জসিম উদ্দিন (৩৫)। তাঁদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, দুই রাউন্ড কার্তুজসহ দেশে তৈরি কিরিচ ও দা উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ দুপুরে এ বিষয়ে থানা সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং ঘটনার বিবরণ দেন।
ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, গত শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেলাল উদ্দিনকে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। এমন সংবাদ পাওয়ার পরপরই পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে প্রথমে ৭০ লাখ টাকা, পরে ৫০ লাখ ও শেষে ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা সূত্র ধরে আজ ভোরে তাঁকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় দেশে তৈরি একটি ওয়ান শুটারগান, দুই রাউন্ড কার্তুজ, কিরিচ ও দা।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে অপহরণ ও অস্ত্র উদ্ধারের দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেলেন দুই কৃষক
অপর দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকা থেকে অপহৃত দুই কৃষক হোয়াইক্যং কম্বনিয়াপাড়ার মো. আবছার (২৮) ও পূর্ব মহেশখালীয়াপাড়ার নুরুল আলমকে (২৩) মুক্তিপণের টাকা দিয়ে অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে বলে স্বজনেরা জানান। গতকাল বুধবার রাতে তাঁরা ঘরে ফিরেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে তাঁরা অপহরণের শিকার হন বলে জানিয়েছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, দুজন মুক্তিপণের টাকা দিয়ে চলে আসার বিষয়টি এখনো তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩৪ জনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে ৮০ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৪ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৬৯ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।