‘খাবার চেয়ে নির্যাতনের শিকার’ যুবক গাড়িতে ঢিল ছুড়ছিলেন

মৌলভীবাজার জেলার মানচিত্র

সাহেদ (৩২) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক কয়েক দিন ধরে এলাকায় অবস্থান করলেও কারও কোনো ক্ষতি করছিলেন না। কিন্তু গতকাল রোববার দুপুরে তিনি হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে চলন্ত গাড়ি ও দোকানপাটে পাথর ছুড়তে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে বেঁধে রাখেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। খাবার চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ায় ওই যুবক এ কাজ করেছেন বলে লোকজন বলছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার উত্তর বাজার আউটার রেলক্রসিং এলাকায়। পরে স্থানীয় আরেক যুবক তাঁকে চিকিৎসার জন্য কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসার পর ওই যুবক চলে গেছেন।

এলাকাবাসী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই যুবক তিন-চার দিন ধরে আউটার রেলক্রসিংসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। কথাবার্তা তেমন বলতেন না। নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে চুপ থাকতেন। খিদে পেলে দোকানপাটে গিয়ে খাবারের জন্য টাকা চাইতেন। কেউ দিতেন, কেউ আবার ফিরিয়ে দিতেন। রাতে দোকানপাটের সামনেই ঘুমাতেন। গতকাল বেলা তিনটার দিকে তিনি হঠাৎ রেললাইন থেকে কিছু নুড়ি পাথর কুড়িয়ে এলোপাতাড়ি যানবাহন ও আশপাশের দোকানপাট লক্ষ্য করে ছুড়তে থাকেন। এতে তিনটি অটোরিকশার সামনের কাচ ভেঙে যায়। এ সময় যানবাহনের চালকদের কেউ কেউ ওই যুবককে অবরোধের সমর্থনকারী ভেবে আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। দু-তিনটি দোকানের ভেতরে ঢিল পড়ে। তবে এতে কারও ক্ষতি হয়নি। এরপর স্থানীয় লোকজন ওই যুবককে ধরে বেঁধে রেখে কুলাউড়া থানার পুলিশকে জানান। একপর্যায়ে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আবদুল মজিদ নামের এক সদস্য গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

উত্তর বাজার এলাকার মোটর যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। বেঁধে রাখার পর ওই যুবক রাস্তার পাশে শুয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বুক ও কাঁধে শক্ত কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলেছেন, খাবার চাইতে গিয়ে তিনি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। এ কারণে ক্ষোভে যানবাহন ও দোকানপাটে ঢিল ছোড়েন। তবে কে বা কারা তাঁকে নির্যাতন করেছেন, তা জানা যায়নি।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নিঃস্বার্থ মানবিক রক্তদান ফাউন্ডেশন’–এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় পুলিশের দুই সদস্য এসে ওই যুবককে অটোরিকশায় করে নিয়ে যান।

কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক সুজন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে ওই যুবককে পাননি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁদের জানিয়েছেন, চিকিৎসার পর ওই যুবক চলে গেছেন। খাবার চাওয়ায় স্থানীয় এক দোকানি ওই যুবককে মারধর করেন, এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ঢিল ছুড়েছেন।