চার বছরেও শেষ হয়নি মডেল মসজিদ নির্মাণ 

২০২০ সালে মসজিদটি হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা বলতে পারছেন না কেউই।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের কাজ কবে শেষ হবে, কেউ জানে না
ছবি: প্রথম আলো

বিশাল স্থাপনার ছাদে অপ্রয়োজনীয় রড কাটছেন পাঁচ শ্রমিক। নিচে পড়ে আছে জেনারেটর, কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরির যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রী। এটি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর শহরের নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের চিত্র।

প্রায় ১১ মাস ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পর ১৫ দিন আগে আবার কয়েকজন কর্মীকে দিয়ে ঢিমেতালে শুরু করা হয় রড কাটার কাজ। এর মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে।

মডেল মসজিদ তৈরির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক সিরাজ মিনহাজ বলেন, ‘কাজ একেবারেই যে বন্ধ, তা নয়। আমরা কাজ করব না, এমনটাও নয়।’ তাঁর ভাষ্য, বেশ কিছু বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা কাজ করবেন।

কোন কোন বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে, এমন প্রশ্নে সিরাজ মিনহাজ বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে বিষয়গুলো এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আগের মসজিদটি আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়েই কাজটির যথাসময়ে শুরু করা যায়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তর। নির্মাণ শেষে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছ থেকে এটি বুঝে নেওয়ার কথা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। সারা দেশে এই প্রকল্পের আওতায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কথা। ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসারের লক্ষ্যেই ২০১৭ সংলে এই প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

শ্রীপুরের মডেল মসজিদ নির্মাণের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। মসজিদ নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কাজ শুরুর পর নিয়ম অনুযায়ী দুই বছরের মাথায় ২০২০ সালে মসজিদটি তৈরি অবস্থায় হস্তান্তর করার কথা তাদের। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল জায়গাজুড়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই জমিতে আগে থেকেই থাকা একটি মসজিদ পাশেই অন্য একটি জায়গায় সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিক আবদুর রহিম, রিপন মিয়াসহ আরও তিনজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, মসজিদটি হবে তিন তলাবিশিষ্ট। মেঝের আয়তন প্রায় ৩৭ হাজার বর্গফুট। এরই মধ্যে তিনটি ফ্লোরের ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগ গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ করবেন না বলে তাদের (গণপূর্ত) কাছে আবেদন করেছে। তারা ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পেলে নতুন করে কার্যাদেশ আহ্বান করা হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, চার বছরে মসজিদ নির্মাণকাজের ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

মডেল মসজিদের কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শ্রীপুর পৌর এলাকার ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেন বলেন, অন্য এলাকায় মসজিদ উদ্বোধন হয়ে গেছে। কিন্তু শ্রীপুরে কাজে ধীরগতির কারণে তা আরও দুই বছরেও শেষ হবে কি না, সন্দেহ আছে। পাশের গাড়ারণ গ্রামের বাসিন্দা মো. ইয়ামিন বলেন, চমৎকার একটা উদ্যোগ প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। এটা মানার মতো নয়। এত বছর সময় লাগা অস্বাভাবিক।