কিলোফ্লাইটের ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদের মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে দান

ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদের মরদেহ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন স্বজনেরাছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ। বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পরও নিজের দেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে দান করে গেলেন। জীবিত থাকাকালেই তিনি মৃত্যুর পর দেহদানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তমের মরদেহ আনা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে পরিবারের সদস্যরা তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ দিলরুবা জেবা, অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসসহ কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তারা।

অধ্যক্ষ দিলরুবা জেবা বলেন, সমাজের মহৎ ব্যক্তিরাই মরণোত্তর দেহ দান করে যান। সাহাবউদ্দিন আহমেদ তাঁদেরই একজন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁর জন্য বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর পরও তিনি এই দেহদানের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতি আরেকটি মহান ব্রত পালন করে গেলেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অপারেশন কিলোফ্লাইটের অন্যতম বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসায় তিনি বার্ধক্যের কারণে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাতে মরদেহ দানের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে আনা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মরহুমের স্ত্রী রোকেয়া নার্গিস, ছেলে তাপস আহমেদ, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা।

সাহাবউদ্দিন আহমেদ ফরিদপুর পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের চরকমলাপুর মহল্লার মৃত গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও লাইলী রশিদ দম্পতির ছেলে। তিনি স্ত্রী রোকেয়া নার্গিস, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাহাবউদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ) বৈমানিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তিনি স্থলযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। হবিগঞ্জের শাহজিবাজারের টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্র বিস্ফোরণের অপারেশনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বেসামরিক পাইলট হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।

অপারেশন কিলোফ্লাইটের মোট ৮৫টি অপারেশনের মধ্যে ১২টি অপারেশনে ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম হামলায় অংশ নেন ৬ ডিসেম্বর। এদিন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার নিয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, শেরপুর ও সাদিপুরের দুটি ফেরিঘাটে থাকা পাকিস্তানি অবস্থান ধ্বংস করেন।

আরও পড়ুন