কক্সবাজারের হোটেলে রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের আয়োজন, শেষ মুহূর্তে পুলিশের বাগড়া

কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতের একটি হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা রোহিঙ্গা নারীদের একাংশ। গতকাল রোববার রাতেছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের এক রোহিঙ্গা তরুণীকে বিয়ে করতে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে কক্সবাজার এসেছেন হামিদ হোসেন (২৮)। কলাতলী সৈকতের কাছে একটি হোটেলে আয়োজন করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। ক্যাম্প থেকে কয়েক শ রোহিঙ্গা উপস্থিত হন সেই বিয়েতে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষের আগেই আয়োজন পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে বরসহ অন্তত ৬৫ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে বরসহ ১৯ জন বিদেশি নাগরিকত্ব পাওয়া রোহিঙ্গা। যাঁর মধ্যে ১২ জন অস্ট্রেলিয়া এবং ৭ জন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গতকাল রোববার রাতে এই ঘটনা ঘটে।

অভিযানের সময় বেশ কিছু রোহিঙ্গা পালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বরের সঙ্গে বিদেশ থেকে যাঁরা এসেছেন এবং দাওয়াত খেতে উখিয়ার আশ্রয়শিবির থেকে যাঁরা এসেছেন—সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে আটক রোহিঙ্গাদের রাতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গার বিয়ে যেন আর না হয়, এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ওসি রাকিবুজ্জামান বলেন, বর হামিদসহ বিদেশি পাসপোর্টধারীরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। একটা সময় তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান এবং সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১৯ রোহিঙ্গা বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ কারণে তাঁদের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে শহরের হোটেলে রোহিঙ্গাদের বিয়ের আয়োজন নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে বিয়েটা বন্ধ করা হয়েছে।

পুলিশ ও হোটেল মালিক সূত্র জানায়, কলাতলী হোটেল–মোটেল জোনের ওই হোটেলে ঘটা করে বিয়ের আয়োজন হচ্ছিল। আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে এসে জড়ো হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে খাবারের আয়োজন শেষ হয়। এরপর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর মুহূর্তে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। তখন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা নারী–পুরুষেরা পালাতে থাকেন। পুলিশ থেকে ৬৫ রোহিঙ্গাকে আটক করে। এর মধ্যে ১৯ জনের কাছ থেকে ১৯টি বিদেশি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে ১২টি অস্ট্রেলিয়া ও সাতটি পাসপোর্ট ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।

আরও পড়ুন

সদর মডেল থানার ওসি রাকিবুজ্জামান বলেন, আশ্রয়শিবির থেকে পাচারের উদ্দেশে কোনো রোহিঙ্গা বের হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইনের ধারায় মামলা গ্রহণের নির্দেশনা আছে। কিন্তু আটক রোহিঙ্গারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ক্যাম্প থেকে বের হয়েছিলেন এবং বিয়ে শেষে তাঁরা সবাই ক্যাম্পে ফিরে যেতেন—এ কারণে মামলা করা হয়নি।

বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবির থেকে আট সদস্যের পরিবার নিয়ে এসেছিলেন রোহিঙ্গা নারী হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা বর তাঁর আত্মীয়। দাওয়াত খেতে তিনি আশ্রয়শিবির থেকে বাসে চড়ে কক্সবাজার শহরে আসেন। পথে বাধার সম্মুখীন হননি তিনি।

বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মহেশখালী কুতুবজোম এলাকার দুই বাংলাদেশি ছৈয়দুল আমিন ও ইমাম হোসেন। জানতে চাইলে ছৈয়দুল আমিন বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে তাঁর এক ভাই থাকেন। ভাইয়ের সঙ্গে বর হামিদের বন্ধুত্ব রয়েছে, সেই সূত্রে তাঁরা বিয়ের দাওয়াত পেয়েছেন।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়শিবির থেকে কোনো রোহিঙ্গা যাতে বের হতে না পারেন, সে জন্য আশ্রয়শিবিরের চারদিকে কাটাতারের বেড়া স্থাপন করা হয়। বসানো হয় ২০টির বেশি তল্লাশিচৌকি। এরপরও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে বেরিয়ে কীভাবে শহরের হোটেলে এসে বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন—ভাবার বিষয়।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত ছয় বছরে আশ্রয়শিবির থেকে পালানোর সময় কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরবর্তী সময়ে সবাইকে আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানো হলেও কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়নি।

আরও পড়ুন