অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের বিবৃতি

মো. কবির হোসেনছবি: সংগৃহীত

আলটিমেটামের পর পদত্যাগ না করায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সহ-উপাচার্য মো. কবির হোসেনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাঁর কার্যালয়ে তালাও দেওয়া হয়েছে। এরপরও পদে বহাল থাকতে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আজ শনিবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সাংবাদিকদের কাছে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন সহ-উপাচার্য। সেই বিবৃতি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনেও পোস্ট করেছেন।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আলটিমেটামের পর ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত হয়ে আজ বিকেলে পদত্যাগ করেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পালন করছিলেন। উপাচার্যের পদত্যাগের খবরের মধ্যে বিকেলে সহ-উপাচার্য মো. কবির হোসেন বিবৃতি দিলেন। বিবৃতিতে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে কিছু কথা বলেন।

বিবৃতিতে সহ-উপাচার্য বলেন, ‘আমি শাবিপ্রবির প্রথম প্রভাষক হিসেবে প্রায় ৩৪ বছর চাকরিকালে দলমত-নির্বিশেষে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার স্নেহভাজন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। আমি সবার জন্য অন্তর থেকে দোয়া করি। আমার শিক্ষকতা জীবনে যেসব ছাত্রছাত্রীর ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছি কিংবা নিজ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের সব ছাত্রছাত্রী যে যেই ধরনের সমস্যা নিয়ে এসেছে, তা সমাধানের চেষ্টা করেছি ও সমাধান করেছি, তা ছাত্রছাত্রীরাই আমার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে। ১ বছর আগে রাষ্ট্রপতি আমাকে ৪ বছরের জন্য প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের পর ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু উন্নয়নমূলক কাজের গুণগতমান যাচাই-বাছাই ও তদারকির দায়িত্ব পালন করছি।’

বিবৃতিতে গত এক বছরের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের বর্ণনা দিয়ে সহ-উপাচার্য লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমি সিলেট ছেড়ে পালিয়েছি, এ ধরনের খবর রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ পদত্যাগ করার জন্য লেখালেখি করছেন। বিষয়টি আমি সুস্পষ্ট করতে চাই, জীবনের অর্ধেক সময়ের বেশি শাবিপ্রবিতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। দীর্ঘদিন থেকেই সিলেটে বাসা তৈরি করে পরিবারসহ বসবাস করছি। আমি বর্তমানে নিজ বাসায় অবস্থান করছি।’

সহ-উপাচার্য বলেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করব, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ আমার সাথে যেকোনো স্থানে আলোচনা করতে চাইলে আমি তোমাদের স্বাগতম জানাই। প্রো-ভিসি হিসেবে সুস্পষ্ট করে আমার সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের বলতে চাই, প্রায় ৩৪ বছর শিক্ষকতা করার পর যদি মনে করো, আমার সেবা তোমাদের আর প্রয়োজন নাই, তাহলে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকনির্দেশনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট আমি পদত্যাগ করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।’

এর আগে গত বুধবার দুপুর ১২টায় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এক দিনের মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কেরা। বেঁধে দেওয়া সময়ে পদত্যাগ না করায় বৃহস্পতিবার বিকেলে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তাঁরা।