স্থানীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলায় চারটি রেঞ্জের আওতায় ১৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে শাল-গজারি বন রয়েছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারির পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর চলছে বন পোড়ানোর এমন ঘটনা।

গত শুক্রবার টাঙ্গাইল বন বিভাগের বাঁশতৈল রেঞ্জের উপজেলার নলুয়া বিটে সখীপুর-ঢাকা সড়কের ঘেচুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কিছু কিছু এলাকায় তখনো অল্প অল্প আগুন জ্বলছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, কে বা কারা ঘণ্টাখানেক আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। গত এক সপ্তাহে শাল-গজারি বনের কমপক্ষে আটটি এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ২০ একর জমির বন পুড়েছে।

কালমেঘা গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক আবু কায়সার বলেন, প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। দুই দিন আগেও দেওয়ানপুর গজারি বনে কয়েক একর গজারি বন পুড়ে গেছে। 

সাইফুল ইসলাম জানান, ‘১০ মার্চ সন্ধ্যায় কালমেঘা দেওয়ানপুর বনে আগুন জ্বলতে দেখেছি। অনেকে ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছে।’

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বনাঞ্চলের কাছাকাছি নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। তাঁরা লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনেক সময় গজারি বনে আগুন দিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ বনের জমি দখলের উদ্দেশ্যে বন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকেন। বনের ভেতরের সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরাও অনেক সময় বনে আগুন দেন। আগুনে বনের ছোট ছোট গজারিগাছ বেশি ক্ষতির শিকার হয়। পোড়া ছোট গাছগুলো কদিনেই শুকিয়ে যায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসজুড়ে চলে শুকনো ও মরা গাছ কাটার ধুম।

বহেড়াতৈল রেঞ্জের এমএম চালা বিটের আওতাধীন আন্ধী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, বনের ভেতর অসংখ্য রাস্তা রয়েছে। কে কখন কোন রাস্তা দিয়ে এসে আগুন দিচ্ছে, তা বোঝার উপায় থেকে না। 

স্থানীয় বিট কর্মকর্তা সাফেরুজ্জামানের গতকাল শনিবার মুঠোফোনে বলেন, ‘দআমার কার্যালয়ে তিনজন স্টাফ রয়েছেন। চার-পাঁচ হাজার একর জমির বন দেখভাল করার লোকবল নেই। তারপরও তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

টাঙ্গাইল বন বিভাগের হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, বনে আগুনের লাগার ঘটনায় তাঁরা কোনো পরিসংখ্যান রাখেন না। তবে কিছু দুর্বৃত্ত বনের জমি দখল আর লাকড়ির জন্য বনে আগুন দিয়ে থাকে। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান জানান, লোকবলের অভাবে অনেকাংশেই বনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরও আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে প্রহরীরা রাত-দিন কাজ করছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ মুঠোফোনে বলেন, আগুন থেকে বনকে রক্ষা করতে এ মৌসুমে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আরও সজাগ হতে হবে।