পঞ্চগড়ে বিএডিসি গুদামের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ঢুকে গেল ট্রেনের কোচ

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত অতিরিক্ত একটি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে বিএডিসি গুদামের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ঢুকে গেছে। সোমবার বিকেলে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনের ওয়াশ ফিডে
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গুদামের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ঢুকে গেছে। এতে এসি স্লিপার কোচটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়ে মাটিতে ঢুকে গেছে। আজ সোমবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে স্টেশনের পূর্ব প্রান্তে ওয়াশ ফিডে (ধোয়ার স্থান) প্রবেশ করানোর সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত ব্যক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে অতিরিক্ত ৭১১৫ নম্বর এসি কোচটি সংযুক্ত করে বৈদ্যুতিক পরীক্ষার জন্য ওয়াশ ফিডে নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) আক্তারুজ্জামানের পরিবর্তে সহকারী লোকোমাস্টার শাফায়েত হোসেন ট্রেনটি চালাচ্ছিলেন। ট্রেনটিতে ১৭টি কোচ নিয়ে পেছনের দিকে পিছিয়ে পানিতে ধোয়ার জন্য সাজানো হচ্ছিল। এ সময় ট্রেনের গতি কিছুটা বেশি থাকায় হঠাৎ করেই ট্রেনের পেছনের দিকে থাকা এসি স্লিপার কোচটির ধাক্কায় প্রথমে রেললাইনের শেষে থাকা বাফার (যেখানে রেললাইন শেষ হয়েছে) ভেঙে যায়। এরপর পার্শ্ববর্তী বিএডিসি গুদামের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে কোচটি অন্তত আট ফুট ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় বিকট শব্দ হলে আশপাশের লোকজন ও রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে কোচটিকে লাইনচ্যুত অবস্থায় রেখেই রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার জন্য একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে প্রস্তুত করা হয়।

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত অতিরিক্ত একটি কোচ প্রথমে লাইনের শেষ মাথায় দেওয়া বাফার ভেঙেছে এবং পরে বিএডিসি গুদামের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ঢুকে পড়েছে। সোমবার বিকেলে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনের ওয়াশ ফিডে
ছবি: প্রথম আলো

ট্রেনটির সহকারী লোকোমাস্টার শাফায়েত হোসেন বলেন, মূলত ট্রেনটি পেছনে নেওয়ার সময় সিগন্যাল দেওয়ার জন্য একজন লোক থাকতে হয়। কিন্তু ওই সময় কেউ ছিল না। আর ১৬টির জায়গায় ১৭টি কোচ একসঙ্গে থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

লোকোমাস্টার আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ট্রেনটিকে পেছনে নেওয়ার সময় আমিও সঙ্গে ছিলাম। পশ্চিম দিকে একটি মানুষ চলাচলের পথ আছে। মূলত ওই পথটি ঠিক রাখতে ট্রেনটি পূর্ব দিকে কিছুটা বেশি চলে গেছে। এ জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

দায়িত্বরত স্টেশনমাস্টার (গ্রেড-৪) নিরঞ্জন রায় বলেন, ‘অতিরিক্ত এসি স্লিপার কোচটি বৈদ্যুতিক পরীক্ষার জন্যই একতা এক্সপ্রেসে সংযুক্ত করে ওয়াশ ফিডে নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় ট্রেনটি সহকারী লোকোমাস্টার শাফায়েত হোসেন চালাচ্ছিলেন। ট্রেনটিতে এ সময় গতি কিছুটা বেশি ছিল। এ জন্য সেটি প্রথমে লাইনের শেষ মাথায় দেওয়া বাফার ভেঙেছে এবং পরে বিএডিসি গুদামের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ঢুকে পড়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ঘটনায় তদন্তও হতে পারে। এতে ট্রেনের শিডিউলের কোনো সমস্যা হবে না।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন রিলিফ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত কোচটিকে উদ্ধার করবে।’

বিএডিসি পঞ্চগড় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মজহারুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জেনেছি। আমাদের আলু বীজ হিমাগার যেখানে আছে, ভাগ্যক্রমে সেদিকে ঘটনাটি ঘটেনি। সেখানে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন আলুবীজ সংরক্ষিত আছে। যে পাশে বিএডিসির সারের গুদাম নির্মিত হচ্ছে, সেদিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আমাদের ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব এবং কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করব। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’