কুয়াকাটায় ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’–এর উদ্বোধন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছে। কুয়াকাটা সৈকতের পর্যটন পার্কের সামনে এ উপলক্ষে বিভিন্ন খাবার ও পণ্যের স্টল বসানো হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

ব্র্যান্ড নেম মুজিব’স বাংলাদেশ প্রচারের অংশ হিসেবে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় দুই দিনের ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটা’ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে কুয়াকাটা সৈকতের পর্যটন পার্কের সামনে স্থাপিত মঞ্চে এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে কুয়াকাটা পৌরসভার সামনে থেকে জাঁকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রা বের হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কেউ কৃষক, কেউ বাউল, কেউ জেলে, আবার কেউ বর-বধূ সেজে অংশগ্রহণ করেন।

শোভাযাত্রায় একটি ভ্যানের ওপর আবহমান বাংলার প্রতীক নৌকার চমৎকার প্রদর্শনী ছিল আকর্ষণীয়। এতে দেখা যায়, নৌকার গলুইয়ে মাঝি বইঠা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ দেশ যে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, তা শোভাযাত্রার একেবারে সামনে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের চারজনকে উপস্থাপন করে ফুটিয়ে তোলা হয়।

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, একসময় কুয়াকাটা আসতে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো। সেখানে আজ মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসা যায়। এটা বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় সফল হয়েছে। বর্তমান সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

দেশের পর্যটন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তপন কান্তি বলেন, ‘পর্যটন খাত অনেক সম্ভাবনার খাত। সবার প্রচেষ্টায় পর্যটন খাতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছাতে হবে। প্রথমে আমাদের নিজের দেশকে ভ্রমণ করে দেখতে হবে। এরপর আমাদের দেশের সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর খবর বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে হবে, যাতে আমাদের দেশে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষেরা ভ্রমণ করতে আসেন। কুয়াকাটাকেও বিশ্বের দরবারে আরও চমৎকার করে উপস্থাপন করতে হবে।’

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, শিল্প মন্ত্রণালয়ের এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম, পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদারসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

উদ্বোধনী পর্বের শুরুতে শামীম হোসেনের কোরিওগ্রাফিতে ‘রাত ভোর ঘুম চোখ ঘুম ঘুম, জাগে রোদ্দুর ঘুম ঘুম চোখ, নেই আঁধার শুধু আলো আলোর ডাক প্রাণ জাগালো’, স্থানীয় শিল্পীদের এ পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব খালি কণ্ঠে দুটি দেশাত্মবোধক গান গেয়ে শোনান। উপস্থিত অতিথিসহ পর্যটকেরা তাঁর গাওয়া এ দুটি গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটা উৎসবে থাকছে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে স্থানীয় শিল্পীরাসহ রাখাইন সম্প্রদায়ের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া সৈকতে সন্ধ্যার পর ফানুস ও বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানো হবে। আরও রয়েছে বিচ ফুটবল ও ভলিবল, পুতুলনাচ।

সৈকতের পর্যটন পার্কের সামনে মূল মঞ্চের উত্তর পাশে নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রীর ১৫টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলে রাখাইন পিঠা-পুলি, পান্তা-ইলিশ, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, কুলি পিঠা, বড়া পিঠা, সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ, হাঁস-রুটির মাংসসহ আরও হরেক রকমের দেশীয় খাবার পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে এখানে ৬০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। ‘পর্যটনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারসহ আরও কিছু আয়োজন রয়েছে ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটা’ অনুষ্ঠানে।

কলাপাড়ার ইউএনও জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু দেশের মানুষের কাছে নয়, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্পে বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এ আয়োজন। এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবাই মুগ্ধ হয়েছেন। এ ধরনের আয়োজনের জন্য কুয়াকাটা বিশ্বের মানুষের কাছে নতুন রূপে পরিচিত হবে। এতে কুয়াকাটায় ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়বে, কুয়াকাটায় বিনিয়োগেও অনেকেই এগিয়ে আসবেন।