ঠাকুরগাঁওয়ে যুবলীগ নেতাকে থানায় মারধরের অভিযোগ

যুবলীগ নেতা মো. আসাদুজ্জামান বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান ওরফে পুলককে থানার এনে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ফেসবুকে আসাদুজ্জামানের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে আসাদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, গত ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করেছেন।

নির্যাতনে যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামানের হাত ভেঙে গেছে। তিনি বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কামাল হোসেন মারধরের অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই রাতে আসাদুজ্জামানকে কোনো নির্যাতন করেননি। তবে আটকের আগে স্থানীয় লোকজন আসাদুজ্জামানসহ আরেক যুবলীগ নেতাকে মারধর করেছিলেন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

এ ঘটনায় ৪ মে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা যুবলীগের নেতারা। লিখিত ওই অভিযোগে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল মজিদ, সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্তসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা স্বাক্ষর করেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে গতকাল রাত থেকে যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামানের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কথা বলছেন। ওই রাতের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আসাদুজ্জামান বলেন, গত ২৯ এপ্রিল রাতে পুলিশের সঙ্গে জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ ওরফে রকির টানাহেঁচড়ার ঘটনা ঘটেছে শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, খালিদ সিরাজকে পুলিশ পিকআপ ভ্যানের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় ওসি কামাল হোসেনের কাছে খালিদ সিরাজকে আটকের কারণ জানতে চান তিনি। কথার একপর্যায়ে ওসি তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ সময় ওসি আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সেখানে ডেকে নেন। পরে পুলিশ তাঁকে মেলা থেকে তুলে নিয়ে সরাসরি থানায় নিয়ে যান।

ওই ভিডিওতে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাকে তুলে আনার সময় আমি ওসির কাছে বারবার করে বলেছি, “আমি যদি অজান্তে কোনো অন্যায় করে থাকি, তবে মাফ চাই।” কিন্তু তিনি (ওসি) সেই কথা শোনেননি।’

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মেলা থেকে থানায় এনে আমাকে মারধর শুরু করে। আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে পুলিশ আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। পরে চোখে কাপড় বেঁধে কয়েকজন পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। পেটানোর একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশ বুট দিয়ে বুক চেপে ধরে। নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে পেটানো বন্ধ করে থানাহাজতে ফেলে রাখে। পরে রাতে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতেই তাঁরা (পুলিশ) আমাকে হাসপাতাল থেকে থানায় ফেরত নিয়ে আসে। সকালে তড়িঘড়ি করে আমাকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদালত আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।’

আজ দুপুরে আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশের নির্যাতনে তাঁর হাত ভেঙে গেছে। সেই ভাঙা হাত নিয়ে তিনি কারাগারে থেকেছেন। ২ মে জামিনে বের হওয়ার পর ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাঁরা তাঁকে নির্যাতন করেছেন, তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

অভিযোগের বিষয়ে ওসি কামাল হোসেন বলেন, ২৯ এপ্রিল রাত সোয়া ১০টার দিয়ে বৈশাখী মেলা থেকে ফোন আসে, একদল যুবক মদ খেয়ে মেলায় নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করছেন। পুলিশ পাঠলে ওই যুবকেরা সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজন আসাদুজ্জামান ও খালিদ সিরাজ রকি নামের দুজনকে আটক করেন। আটকের সময় স্থানীয় লোকজন ওই দুই যুবককে মারধর করেন। এতে তাঁরা আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ জানতে পারে, আসাদুজ্জামান ও খালিদ সিরাজ যুবলীগ নেতা। সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছিল। ওই রাতেই জেলার যুবলীগ নেতারা থানায় এসে ওই দুজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানান। তবে মেলা কর্তৃপক্ষ যেহেতু ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে, তাই তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আসাদুজ্জামানের অভিযোগ সম্পর্কে ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘রাতেই ছেড়ে না দেওয়ার কারণে এখন সে (আসাদুজ্জামান) আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে। আসলে আমার অপরাধ হলো, পুলক নেতা মানুষ, তাঁকে কেন ছেড়ে দেওয়া হলো না। এই পুলকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, পুলিশকে লাঞ্ছিত করাসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে আর রকির বিরুদ্ধে এমন নয়টি মামলা রয়েছে। এতগুলো মামলার আসামিকে কীভাবে ছেড়ে দেব? তাই আমি তাঁদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’