রাঙামাটির ভাসমান হাটে মৌসুমি ফলের ঘ্রাণ
ভাসমান হাটে ভোরেই একের পর এক ঘাটে ভিড়ছে নৌকা। তাতে বোঝাই পাকা মৌসুমি ফল। সকালের হাট ধরতে কৃষকদের তোড়জোড়। এরই মধ্যে দল বেঁধে ফল ব্যবসায়ীরা উপস্থিত। ফলের নৌকা ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দর-কষাকষি। রাঙামাটি জেলা শহরের সমতা ঘাট এখন ম-ম করে পাকা ফলের ঘ্রাণে।
মৌসুমি ফল বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাঙামাটি শহরের বনরূপা পেট্রলপাম্প হতে সমতা ঘাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভিড় জমে থাকে। গত মঙ্গলবার সকালে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দেড় শতাধিক নৌকা পাকা মৌসুমি ফল নিয়ে ভাসছে কাপ্তাই হ্রদের সমতা ঘাটে। কেউ বিক্রি করছেন নৌকায় বসে আবার কেউ ফল বিক্রি করছেন সমতা ঘাটের পাড়ে। নৌকায় ফল দেখতে উঠছেন ক্রেতা-পাইকারেরা। ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা এলাকা থেকে আসা সুমন্ত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেশীয় পাকা আম নিয়ে এসেছি। ১০ ঝুড়ি আম আট হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমাদের এলাকা থেকে একসঙ্গে অন্তত ৪০ জন কৃষক মৌসুমি ফল বিক্রি করতে এসেছেন। ফলের দাম ভালো থাকায় আমরা খুশি। পাকা ফলের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রি করতে খুব একটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না।’
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশীয় পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম পাকা আম দাম বেশি হলেও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি পাকা আম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মে মাসের শুরু থেকে দেশি ও চায়না থ্রি জাতের পাকা লিচু বিক্রি হচ্ছে। দেশি লিচুর দাম একটু কম। দেশি লিচু আকারভেদে প্রতি ১০০টির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। চায়না থ্রি প্রতি ১০০টি লিচুর দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি পাকা ও আধা পাকা কাঁঠালও বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক জোড়া আনারস ৪০ থেকে ১০০ টাকায় এবং কাঁঠাল আকারভেদে ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
কাপ্তাই হ্রদের সমতা ঘাটের ভাসমান ফলের হাট ছাড়াও রাঙামাটি শহরের চারটি হাটসহ বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৬০টি হাটে এখন মৌসুমি পাকা ফল বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. আমিনুল ইসলাম ও মো. মিজান বলেন, সমতা ঘাটে ভোরে এসে মৌসুমি ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর একটু দাম দিয়ে ফল কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বেড়েছে। এখন মূলত আম, লিচু, কাঁঠাল ও আনারস বাজারে বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩ হাজার ৬২৮ হেক্টর আম, ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর কাঁঠাল, ১৯ হাজার ৩ হেক্টর লিচু ও ২ হাজার ৫৩৭ হেক্টরে আনারস চাষ হয়েছে। এসব চার মৌসুমি ফলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন। অন্যান্য বছরের তুলনায় ফল উৎপাদন তেমন বেশি না হলেও আগাম বৃষ্টি হওয়ায় ফলনের মান ভালো বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে বাজারে পাকা আম, লিচু, কাঁঠাল ও আনারস বিক্রি হচ্ছে। তবে কাঁঠাল, লিচু ও আম এখনো পুরোপুরিভাবে পাকেনি। আরও ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এসব ফলের ভরা মৌসুম শুরু হবে। বছরের প্রথম পাকা ফল হওয়ায় এখন বাজারে দাম বেশি। তাই কৃষকেরাও বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচু ও আমে ফলন কম। তবে একাধিকবার বৃষ্টি হওয়ায় ফলের মান ভালো হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।