মানিকগঞ্জে সংসদ সদস্যের মতবিনিময় সভায় গরমে নাস্তানাবুদ ভাতাভোগীরা

মতবিনিময় সভায় মাটিতে বসে থাকা ভাতাভোগীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘিওরের দুর্গা নারায়ণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠেছবি: আব্দুল মোমিন

সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার অংশ হিসেবে ভাতাভোগী পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদরের এ সভায় ভাতাভোগী বয়স্ক নারী–পুরুষ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা থাকতে হয়। প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় বসে থেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হন তাঁরা।

সভায় যোগ দেওয়া অন্তত ২০ জন ভাতাভোগীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) সদস্য এবং চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ তাঁদের এই সভায় আসতে চাপ দেন। অন্যথায় ভাতার সুবিধা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়। এ কারণে তাঁরা সভায় এসেছেন। তাঁদের সভাস্থলে যাতায়াতের জন্য বাসভাড়া করা হয়। এই বাসে করে তাঁরা এলাকা থেকে সভাস্থলে আসেন। ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে এই সভা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় সামাজিক সুরক্ষা খাতে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছেন ঘিওর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১০ হাজারের বেশি নারী–পুরুষ। সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার অংশ হিসেবে তাঁদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা সদরে ঘিওর দুর্গা নারায়ণ (ডিএন) পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আওয়ালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন ভাতাভোগীও বক্তব্য দেন। ভাতাভোগীদের উদ্দেশে গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের এই ভাতা দিয়ে আসছে। এই ভাতা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন।’

নিজের সংসদীয় আসনে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে সভায় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান বলেন, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতা আনতে হবে। তিনি উপস্থিত ভাতাভোগীদের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, সভা উপলক্ষে বিদ্যালয় মাঠে বিশাল প্যান্ডেলে কয়েক হাজার চেয়ার বসানো হয়েছে। সামনে বড় এক মঞ্চ। সকাল সাড়ে নয়টার পর থেকে বাসে করে উপজেলার দূরদূরান্ত বিভিন্ন এলাকা সভাস্থলে আসতে থাকেন ভাতাভোগীরা। সকাল ১০টায় সভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। চেয়ারে সংকুলান না হওয়ায় অনেকে রোদের মধ্যে মাঠে বসে পড়েন। বেলা একটার দিকে সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা মঞ্চে উপস্থিত হন। বেলা তিনটার দিকে শেষ হয় সভাটি।

ভাতাভোগী অনেকেই বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। প্যান্ডেলের ওপরে কাপড়ের ছাউনি ভেদ করে সূর্যের তাপ ভেতরে প্রবেশ করছিল। পাঁচ ঘণ্টা বসে থেকে গরমে ভাতাভোগীদের অস্বস্থিকর পরিস্থিতির শিকার হন। গরম থেকে রক্ষা পেতে অনেককে হাতপাখা দিয়ে বাতাস নিতে দেখা যায়।

এক প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী বলেন, সকাল ১০টার দিকে তাঁরা মাঠে আসেন। দুপুরে তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসে থাকা খুব কষ্ট হয়েছে তাঁর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ভাতাভোগী বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যরা তাঁদেরকে চাপ দিয়ে সভায় নিয়ে আসেন। সভায় উপস্থিত না হলে তাঁদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ কারণে সভায় আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদস সালাম বলেন, ‘সভার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। দীর্ঘ সময় বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের বসিয়ে রাখা অশোভনীয় এবং অপতৎপরতা।’