প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করবে ল্যান্ড জোনিং প্রকল্প: ভূমিমন্ত্রী

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, সরকারের পরিবেশ ও জলবায়ু নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ল্যান্ড জোনিং প্রকল্প ও বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই ভূমির ব্যবহারে উৎসাহ ও প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে আনা হবে। ল্যান্ড জোনিং প্রকল্প প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা এবং ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আজ শনিবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে পরিবেশবিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন (বিভাগ) দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে। উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মোসাম্মাৎ হোসনে আরা ও জীববিজ্ঞান স্কুলের (অনুষদ) ডিন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘ল্যান্ড জোনিং প্রকল্পের আওতায় আমরা মৌজা ও প্লটের ওপর ভিত্তি করে একটি ডিজিটাল ম্যাপ ও ভূমির ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করব। এর মধ্যে জমির গুণমান মূল্যায়নের ভিত্তিতে কৃষি, আবাসিক, বাণিজ্যিক, পর্যটন ও শিল্প বিকাশের মতো নির্দিষ্ট জমিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে। ল্যান্ড জোনিং প্রকল্পের তথ্য–উপাত্ত ও ম্যাপ কাজে লাগিয়ে ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও শিল্প-সড়ক নির্মাণ রোধ করা হবে। ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি বজায় রেখে পরিবেশ রক্ষা ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে।’

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আরও বলেন, ল্যান্ড জোনিং প্রকল্পের ডেটা ও ম্যাপ ব্যবহার করে কৃষিজমি, বন, টিলা, পাহাড়, নদী, খাল, জলাশয় রক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। পরিকল্পিত জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করা ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হবে।

অনুষ্ঠানে জলবায়ুবিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন কঠোর বাস্তবতা। এটা স্পষ্ট যে, এখন হেমন্তে (শুষ্ক মৌসুম) বৃষ্টি হয়। আর শীতকালে যতটা ঠান্ডা হওয়া উচিত, ততটা হয় না। খুলনা অঞ্চলে উল্লেখযোগ্যভাবে লবণাক্ততা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যনিরাপত্তা এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন দ্বিতীয়বারের মতো এ সম্মেলন আয়োজন করেছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পোল্যান্ড, ইতালি ও জার্মানি থেকে ২৪৫ জন দেশি-বিদেশি গবেষক অংশ নিয়েছেন। প্রায় ৪৫ জন বিদেশি অতিথি এসেছেন। এতে ১২৮টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন, ৪৮টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন, ৬টি কি-নোট পেপারসহ ১৮৩টি গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। সম্মেলন শেষে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করে সরকারকে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।