সেফ হোমে বিয়ে হলো লাভলীর
বাক্প্রতিবন্ধী লাভলী খাতুনকে (২৮) নীলফামারী থেকে ২০১০ সালে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরই তাঁকে পাঠানো হয় রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বায়ায় অবস্থিত সেফ হোমে। ১৩ বছর পর শনিবার বিকেলে ওই সেফ হোম কর্তৃপক্ষ ধুমধাম করে তাঁর বিয়ে দিয়েছে। এ বিয়েতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১০০ অতিথি ছিলেন।
লাভলী খাতুনের বরের নাম মো. হাবিব (৪২)। বাড়ি নগরের বড়বনগ্রাম দুরুলের মোড় এলাকায়। তিনি রাজশাহী শহরে অটোরিকশা চালান। মো. হাবিবের আগের স্ত্রী দুই বছর আগে মারা গেছেন। আগের স্ত্রীর পক্ষের তিনটি ছেলে রয়েছে, যা ইশারা ভাষায় বোঝানো হয়েছে লাভলীকে। সব জেনে তিনি খুশিমনে এই বিয়েতে রাজি হয়েছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত পবা উপজেলার বায়ায় অবস্থিত সেফ হোমটির নাম ‘শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন’।
বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি মানবিক কাজ। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য আদালতে তাঁদের জামিন নিতে হয়। লাভলী খাতুনের সঙ্গে হাবিব পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। বিয়েতে নিজেরা খুশি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অভিভাবকহীন এই তরুণীকে বিয়ে দিতে পেরে আমরাও খুশি।’
এই বিয়েতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেনও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির কোনো ঠিকানা ছিল না। তিনি একটা সংসারের ঠিকানা পেলেন। বিয়েতে তাঁকে খুবই খুশি লাগছিল।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অভিজিত সরকার, রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ, রাজশাহীর নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. শামসুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক আবদুল্লা আল ফিরোজ, সেফ হোমের উপতত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক প্রমুখ। এ ছাড়া বরযাত্রী এসেছিলেন আরও প্রায় ২০ জন।
শনিবার বিকেলে ওই সেফ হোমে গিয়ে দেখা যায়, বিয়েতে আয়োজনের কোনো কমতি নেই। বর মো. হাবিবের তিন ছেলে বাবার পাশে বসে আছে। বিয়ের দেনমোহর ঠিক করা হয় এক লাখ টাকা। বরের ছেলে মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলে, বাবার বিয়েতে খুশি তারা।
সেফ হোমের উপতত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিয়ে উপলক্ষে সেজেগুজে এসেছেন। লাইজু রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, লাভলী খাতুন নিজের সংসারে সুখে থাকবেন, এটা ভেবে তাঁর আনন্দ। এর আগে ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর শিরিনা ও অন্তরা নামে ঠিকানাহীন দুই মেয়েকে তিনি এভাবে বিয়ে দিয়েছেন। শিরিনার একটি ছেলে ও অন্তরার একটি মেয়ে হয়েছে। তাঁরা সুখে আছেন।