সকালে পড়াশোনা আর বিকেলে ফুচকা বেচে জিপিএ-৫ তাহিবুলের
সকালে পড়াশোনা আর বিকেলে বাবার সঙ্গে ফুচকা বিক্রি। এভাবেই দিন কাটে তাহিবুল ইসলামের। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বাবার ফুচকার দোকানে সময় দিতেন তাহিবুল। তবে বাবার বয়স বেড়ে যাওয়ায় তাহিবুলকেই এখন পুরো দোকান সামাল দিতে হয়। সংসারের খরচ আর নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাহিবুল পুরোদস্তুর ফুচকাদোকানি। এত সংগ্রামের মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন তাহিবুল। এবারের আলিম পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এই তরুণ।
তাহিবুলের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের পূর্বপাড়ায়। বাবা বাদল হোসেন আর মা আনিসা বেগম। দুই ভাই ও দুই বোনের তৃতীয় সন্তান তাহিবুল। তিনি বিরামপুর চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালের আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
তাহিবুলের এমন সাফল্যে তাঁর পরিবারের সবাই বেশ খুশি। যাঁরা তাহিবুলের নিয়মিত ক্রেতা, তাঁরাও অভিনন্দন জানাচ্ছেন এই তরুণকে। গতকাল বুধবারও ফুচকা বিক্রি করেছেন তাহিবুল। পৌর শহরের ঢাকা মোড় এলাকায় সড়কের পাশেই তাঁর দোকান। তাহিবুলের ফলাফল জানতে পেরে গতকাল তাঁর দোকানে ক্রেতাদের ভিড় আরও বেড়ে গিয়েছিল। এমন খুশির দিনে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা যখন হৈ-হুল্লোড় করছেন, তখন তাহিবুল জীবিকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুচকা বানাতে বানাতে তাহিবুল বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে বাবার ফুচকার দোকানে এসে বাবাকে সহযোগিতা করতাম। সকালে মাদ্রাসায় যেতাম আর বিকেলে দোকানে ফুচকা আর চটপটি বিক্রি করতাম। রাতে লেখাপড়া শেষে আবার বাবা-মায়ের সঙ্গে ফুচকা আর চটপটির উপকরণ প্রস্তুত করতাম। এভাবেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এর আগে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ–৪.৭৮ পেয়েছিলেন তাহিবুল। তখন জিপিএ-৫ না পেয়ে তাহিবুলের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আবার ঘুরে দাঁড়ান তিনি। তাহিবুল বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা আমাকে অনেক সাহস দিয়েছেন। আলিমে ভর্তি হওয়ার পর সকালে মাদ্রাসায় ক্লাস করতাম। আর বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তার পাশে ফুটপাতে ফুচকা বিক্রি করি। এখন ইচ্ছা আছে দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। বাবা-মার কষ্ট দূর করব।’
বিরামপুর চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক এ এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘তাহিবুলের পরিবারে অভাব-অনটন আছে, এটা সত্যি। কিন্তু পরিবারের অভাব তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাহিবুল কখনো নিজের মানসম্মানের কথা চিন্তা না করে রাস্তার পাশে ফুচকা বিক্রি করে নিজের পড়াশোনা খরচ জোগাড় করেছে। তাহিবুল পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ও আন্তরিক। সে নিয়মিত ক্লাস করত। আমার বিশ্বাস, তাহিবুল দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, ফুচকা বিক্রির পাশাপাশি পড়াশোনা করে একজন তরুণ জিপিএ-৫ পেয়েছেন, এটা বিরামপুরবাসীর জন্য গর্ব। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য তাহিবুল এখন অনুপ্রেরণা। তাহিবুল বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা চাইলে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে সহযোগিতা করা হবে।