দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে এবারও ভোটের মাঠে আলোচনায় ছিলেন জামাতা ও শ্বশুর। তবে দুজনের কেউ জিততে পারেননি। এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি)। শ্বশুরের পরাজয়ের জন্য জামাতাকে দায়ী করছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) টানা দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির প্রস্তুতি কমিটির (রওশনপন্থী) সহসভাপতি জিয়াউল হক মৃধা এবং তাঁর জামাতা (মেয়ের স্বামী) জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এবারও নির্বাচনের মাঠে শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন। জিয়াউল হক মৃধা সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের কালীকচ্ছ গ্রামের আর রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ আসনে ৮৪ হাজার ৬৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল) পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৪৩১ ভোট। আর রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (লাঙ্গল) ৩ হাজার ৪০৮ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন।
সরাইল উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আলী নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, লোকজন বলছেন, জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্বের সুযোগে ভোটাররা অন্য প্রার্থীকে খোঁজে নিয়েছেন।
আজ সোমবার সরাইল উপজেলা সদর, নোয়াগাঁও এবং কালীকচ্ছ ইউনিয়নে ঘুরে ২০-২৫ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা এলাকার সজ্জন হিসেবে পরিচিত জিয়াউল হক মৃধার ভরাডুবির জন্য তাঁর জামাতাকে দায়ী করেছেন। নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিপক্ষের লোকজন জামাই-শ্বশুরের বিরোধকে সামনে নিয়ে এসে সুবিধা নিয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে জামাই-শ্বশুরের লড়াইয়ের বিষয়টি সাধারণ ভোটারের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এ সুযোগে ভোটাররা জামাই-শ্বশুরকে বাদ দিয়ে তৃতীয় প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন।’
এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এই আসনে দলীয় কোনো প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন জিয়াউল হক। তখন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকেই দেওয়া হয় লাঙ্গল প্রতীক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জিয়াউল হক। তবে সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু ওই নির্বাচনেও শ্বশুরের ভরাডুবি হয়। ওই নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির প্রার্থী হয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি) পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা সিংহ প্রতীকে প্রায় ৪০ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জিয়াউল হক মৃধা নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী জোটের প্রার্থী হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রেজাউল ইসলাম ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে জামানত হারান। এরপর গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে দলীয় লোকজনের বাধায় সরে দাঁড়ান। আর দলীয় প্রার্থী হন সরাইল উপজেলার বাসিন্দা দলটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ।
আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, রেজাউল এখানে এসে শ্বশুরের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে একটা তামাশার পাত্র হয়েছেন। তিনি এখানে ভোটে না দাঁড়ালে তাঁর শ্বশুর বিজয়ী হতে পারতেন।